গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই হলের রুমে রুমে শিক্ষার্থীদের ডাকতে যান। আল-আমিন নামের একজন সাফায়েতকে ডাকতে গেলে তিনি কর্মসূচিতে যেতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নাজমুলসহ চার-পাঁচজন তেড়ে এলে নিজেকে রক্ষার জন্য তিনি বঁটি উঁচিয়ে ধরেন। এ সময় আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা তাঁদের থামিয়ে দেন। পরে কর্মসূচি শেষে ছাত্রলীগের চার-পাঁচজন এসে সাফায়েতকে মারধর করেন।
আহত অবস্থায় সাফায়েতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে হাতে সমস্যা বেশি হওয়ায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী সাফায়েত হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শেরে বাংলা হলের ২২১ নম্বর কক্ষে থাকেন। যাঁদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা হলেন মতিহার হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রলীগ কর্মী আল আমিন এবং তাঁদের অনুসারী কয়েকজন। আল আমিন ও নাজমুল হাসান দুজনেই ওই হলে থাকেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী।
ভুক্তভোগী সাফায়েতে বলেন, ‘শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা। হাত ফেটে গেছে। হাতে ফ্র্যাকচার হওয়ায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। গতকাল ছাত্র উপদেষ্টার সহায়তায় হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলাম। পরে হল প্রাধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে রাতে হলে থেকেছি। আজ সকালে আবার হাসপাতালে গেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। অবশ্যই দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। নাজমুল হাসান এই হলের নন। অন্য হল থেকে এসে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাফায়েতের বন্ধু সমাজকর্ম বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম খান বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে সব সময় সাফায়েতের পাশে আছি। এ রকম অতর্কিত হামলায় সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।’
শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি হলেই ছিলাম। কিন্তু কেউ আমাকে জানায়নি। হলের ঘটনা আমাকে আগে না জানিয়ে তারা ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। পরে সন্ধ্যায় আমাকে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। আমার দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রাথমিকভাবে আমি ওই ছাত্রের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সে এখন ভালো আছে।’ তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক শাহ মো. শাহান শাহরিয়ারকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।