নারীদের নেতৃত্বে এনে জাতিসংঘকে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

0
99
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাঁদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে। নারীদের নেতৃত্বে এনে জাতিসংঘকে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে।

গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রতিনিধি ডাইনিংরুমে এই সভা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনো নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিজেদের অংশীদারত্বের ভিত্তি বাড়াতে হবে, যাতে সব ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা একটি আদর্শ হয়ে ওঠে। নারীর অংশগ্রহণকে উচ্চতর পর্যায়ে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নেতা হিসেবে, আমাদের তাঁদের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে এবং তাঁদের এই বিষয়ে সাহসী উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত করতে হবে।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি দেশ আলাদা। তাদের ভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। তবে সবাই যেহেতু ঐতিহাসিক অ্যাজেন্ডা ২০৩০ গ্রহণ করেছে, সেহেতু তাদের লিঙ্গসমতা অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই সেই অঙ্গীকার থেকে পিছিয়ে যেতে পারি না। নারীনেত্রী হিসেবে, সব নারীর পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যদের পথ দেখাতে পারে, এমন উদাহরণ তৈরি করা আমাদের দায়িত্ব। একটি লিঙ্গসমতার বিশ্ব অর্জনের জন্য অবশ্যই আমাদের অবস্থান ও শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।’

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। শুরুতেই শেখ হাসিনা এই সভা আয়োজন করার জন্য পিজিএ ও ইউএন উইমেনের নির্বাহী পরিচালককে ধন্যবাদ জানান।

২০২১ সালে প্ল্যাটফর্মটির সূচনা হয়। এ প্ল্যাটফর্মকে খুব দরকারি বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখানে তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। একে অপরের কাছ থেকে শেখেন যে কীভাবে স্থানীয় সমাধানগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়।

শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যাকে পেছনে ফেলে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব অর্জনের প্রচেষ্টা কোনো ফল দেবে না। লিঙ্গসমতা একটি বিকল্প নয়, বরং একটি ন্যায্য ও ন্যায়সম্মত বিশ্ব অর্জনের জন্য অপরিহার্য বিষয়।

নিজ দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। যার ফলে জনগণ ছাড়া আর কোনো সম্পদ ছিল না। সুতরাং আমরা আমাদের সমগ্র মানবসম্পদ পুঁজিকে কাজে লাগানোর এবং একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আমাদের সমান অংশীদার হিসেবে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমরা জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি গ্রহণ করেছি।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার মেয়েদের শিক্ষা ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও বিনা মূল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, প্রাথমিক স্তরের ৬০ শতাংশ স্কুলে নারী শিক্ষক কর্মরত। দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে ৪০ লাখের বেশি নারী কর্মরত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এবং তাঁদের অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য নির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রেয়াতি হারে ঋণ নিশ্চিত করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ব্যবসায়িক উদ্যোগে নারীদের প্রচার ও সহায়তার জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য দুয়ার অবারিত করেছে তাঁর সরকার।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীরা এখন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রদূত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হচ্ছেন। তাঁরা বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপদে আসীন হচ্ছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত সব পর্যায়ে নারীদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। সরকার আইসিটি-ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারী ও মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, দেশের ইউনিয়ন ও পৌর ডিজিটাল সেন্টারগুলো একজন নারী ও একজন পুরুষ দ্বারা পরিচালিত হয়। পাশাপাশি সরকার নারীদের ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রযুক্তিগত স্টার্টআপ, ই-কমার্সসহ আইসিটি সেক্টরে লিঙ্গসমতা অর্জন করা। আমরা জেন্ডার-সংবেদনশীল বাজেট প্রবর্তনকারী প্রথম দেশগুলোর অন্যতম। আমাদের বাজেটের ৩০ শতাংশ নারী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের নারীরা স্থিতিশীলতা অর্জনে অব্যাহত প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লিঙ্গসমতাভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নারী উন্নয়নে বিনিয়োগ আমাদের লভ্যাংশ দিয়েছে। আজ জিডিপিতে নারীর অবদান ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নারীকে তাঁদের পরিবার ও সমাজ—উভয় ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম করেছে।’

বাসস

নিউইয়র্ক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.