‘মরুভূমির জাহাজ’ নামে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত প্রাণী উট। রাজধানী ঢাকার মতো শহরে উট কোরবানি খুবই বিরল। কেউ যদি সেই উট কোরবানি দেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
এ বছর ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে চারটি উট আনা হয়েছে। উট যেখানে রাখা হয়েছে, এর আশপাশে আগ্রহী সাধারণ মানুষের ভিড় রয়েছে। তবে এমন ভিড় শুধু ছবি-সেলফি তোলা কিংবা ভিডিও বানানোর জন্যই। অনেকে আবার কত টাকায় এসব উট বিক্রি হবে, সে দামটাও আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইছেন। কিন্তু কেনার মতো আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
গাবতলী হাটের উত্তর প্রান্তে মূল হাটের অংশে ভিন্ন দুজন ব্যবসায়ী ওই উট চারটি এনেছেন। এর মধ্যে এক ব্যবসায়ী এনেছেন তিনটি। আরেকটি এনেছেন অন্য এক ব্যবসায়ী। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই চারটি উটের একটিও বিক্রি হয়নি, এমনটি আগ্রহী কোনো ক্রেতা দরদামও করেননি বলে জানালেন ওই ব্যবসায়ীরা।
পাবনার কাশীনাথপুর থেকে নিজের খামারে পালা একটি উট হাটে বিক্রির জন্য এনেছেন আমজাদ হোসেন। পাঁচ বছর পালা এ উটের জন্য দাম হাঁকাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা। উটটি আলোচনায় আনতে এর নামও দিয়েছিলেন ‘প্রিন্স মামুন’। কিন্তু হাটে এসে কোনো ক্রেতা এখনো উটটির জন্য কোনো দাম বলেননি বলে জানান খামারি আমজাদ।
প্রথম আলোকে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘হাটে আসার পর উট ও এর দাম নিয়ে অসংখ্য সাংবাদিক ও ইউটিউবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এখনো কোনো ক্রেতা এসে উট কেনার জন্য দরদাম করেনি। মানুষ আসে, উট দেখে, দাম জানতে চায়; কিন্তু কেনার ইচ্ছা নিয়ে কেউ দাম বলে না।’ উটটি বিক্রি করতে পারবেন কি না—এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলেও জানান তিনি।
আমজাদ হোসেন আরও বলেন, মোবাইলে যোগাযোগ করে কয়েকজন ২০-২২ লাখ টাকা দাম বলেছেন। কিন্তু মোবাইলে যোগাযোগকারীরা কেউ এখনো হাটে এসে উটটি দেখেননি। তাই শেষ পর্যন্ত তাঁরা এসে কিনবেন কি না, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে যশোরের বেনাপোলের ফিরোজ আল মামুন ডেইরি ফার্ম থেকে তিনটি উট গাবতলী হাটে এনেছেন আশিকুর রহমান। মানুষের কাছে উটগুলোর দাম বলতে বলতে তিনি ক্লান্ত হয়ে গেছেন বলে জানান। এর সঙ্গে মানুষের উৎসাহ, ছবি তোলার হিড়িক—এসবও তাঁকে সামাল দিতে হচ্ছে।
বেলা তিনটার দিকে বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক আশিকুর রহমানকে ভিডিও সাক্ষাৎকারের জন্য অনুরোধ করেন। আশিকুর তখন সবেমাত্র দুপুরের খাওয়া সেরে মুখে পান চিবোতে চিবোতে আয়েশ করে উটগুলোর পাশে রাখা একটি চেয়ারে বসেছিলেন। সাংবাদিকদের অনুরোধে পাল্টা অনুরোধ জানিয়ে আশিকুর বলেন, ‘ভাই কথা কইতে কইতে আমি ক্লান্ত। আমারে মাফ করেন। আপনেরা ৫-১০ মিনিট দাঁড়ান। আমার সঙ্গে আরেকজন আছেন, তিনি খাইতে গেছেন। তিনি এলে তাঁর কথা নেন।’
আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উট তিনটা দুই বছর তাঁদের খামারে পালা হয়েছে। একেকটি উটের জন্য দাম চাইছেন ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু এখনো কোনো ক্রেতা দাম বলেননি।
আশিকুর আরও জানান, গত বছর কোরবানির ঈদে গাবতলী হাটে তাঁরা আটটি উট এনেছিলেন। এর মধ্যে চারটি বিক্রি হয়েছিল। এ বছর ঢাকার পাশপাশি চট্টগ্রামে চারটি উট নেওয়া হয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে একটি উট ৩২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে গাবতলী হাটে এখনো কেউ দাম বলেননি জানিয়ে আশিকুর বলেন, গাবতলী হাটে এখনো কেউ দাম পর্যন্ত বলেননি। যদি বিক্রি না হয়, তাহলে আবার খামারেই ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তবে একেকটি উটের জন্য কমপক্ষে ২৮ লাখ টাকা দাম পাওয়া গেলেও বিক্রির ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ওই সময় তিনটি উটকে ঘিরে হাটে যাওয়া ক্রেতা ও শিশু-কিশোরদের ভিড় দেখা গেছে। কেউ এসব উটের ভিডিও করছিলেন, কেউ–বা ছবি তুলছিলেন। কেউ কেউ আবার উট রাখার সংরক্ষিত জায়গার ভেতরে গিয়ে উটের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন। সাধারণ মানুষের এমন অতি উৎসাহের কারণে উটগুলোও অস্বস্তিতে ছিল। বসে থাকা উটগুলো হঠাৎ হঠাৎ উঠে দাঁড়াচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে আশিকুরকে বিরক্ত হতেও দেখা গেছে।
এমন সময় এক ব্যক্তি উটের কাছে এসে বিক্রেতার খোঁজ করেন। চেয়ার ছেড়ে দ্রুত উঠে সেই ব্যক্তির কাছে যান আশিকুর। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘উট কিনবেন স্যার? নেন, ভালো হইব।’ ওই ব্যক্তি উটের দাম কত চাওয়া হচ্ছে আর কত হলে বিক্রি করবেন—এগুলো জিজ্ঞেস করেন। পরে মুঠোফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেখান থেকে চলে যান। তাঁর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আশিকুর আবার চেয়ারে বসে পড়েন।
ড্রিঞ্জা চাম্বুগং
ঢাকা