চ্যাম্পিয়নস লিগ: প্রথম রাতেই মাঠে পাঁচ চ্যাম্পিয়ন

0
18
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লিগের ট্রফি, এএফপি

খেলে ইউরোপের দেশগুলোর ক্লাব; কিন্তু উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ যেন ক্লাব ফুটবলেরই ‘বিশ্বকাপ’। খেলার মানে আর জনপ্রিয়তায় ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতার নতুন আসর শুরু হচ্ছে আজ। ‘নতুন আসর’ বলতে এটি শুধু আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় আরেকটি নতুন মৌসুমই নয়, ভিন্ন সংস্করণেই নতুন।

৩২–এর বদলে দল এবার ৩৬টি, ছয় দল করে একটি গ্রুপের বদলে সব দলের জন্যই একক পয়েন্ট তালিকার লিগ পর্ব—মোটাদাগে বড় পার্থক্য এ দুটো। দল বেড়ে যাওয়ায় ম্যাচ বেড়েছে, পরের রাউন্ডের ১৬ দল নির্ধারণে পদ্ধতিরও পরিবর্তন ঘটেছে।

২০২৪–২৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথাগত ড্র হয়নি। উয়েফার র‍্যাঙ্কিং অনুসারে প্রতিটি দলকে নির্দিষ্ট পটে রেখে প্রযুক্তির সাহায্যে আট প্রতিপক্ষ নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে চার দলের সঙ্গে ম্যাচ নিজেদের মাঠে, বাকি চারটি খেলতে হবে প্রতিপক্ষের মাঠে।

লিগ পর্বে মোট আটটি ‘ম্যাচ ডে’–তে খেলা হবে, অন্যভাবে যা ‘প্রথম রাউন্ড’ বা ‘প্রথম সপ্তাহ’ও বলা যায়। এর মধ্যে প্রথম সপ্তাহে খেলা টানা তিন রাত। প্রতি রাতে ১২টি করে তিন রাতে খেলবে ৩৬ দল। পরের ম্যাচ ডে–গুলোতে অবশ্য খেলা হবে দুই রাত, প্রতি রাতে নামবে ১৮টি করে দল।

প্রথম ‘ম্যাচ ডে’ বা প্রথম সপ্তাহের প্রথম রাতে নামতে চলেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ এবং সাবেক চার চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল, বায়ার্ন মিউনিখ, জুভেন্তাস ও এসি মিলান। সাবেক চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে লিভারপুল আর এসি মিলান আবার মুখোমুখি। রাতের সবচেয়ে বড় ম্যাচও এটিই।

এসি মিলান–লিভারপুল

এই ম্যাচটিকে বলা যায় ১৩ ট্রফির লড়াই। অনেকের চোখেই লিভারপুল ও এসি মিলানের ম্যাচ মানে ২০০৫ আসরের সেই ফাইনাল, ফুটবল ইতিহাসে যা অন্যতম নাটকীয় এবং রোমাঞ্চকর লড়াই হিসেবে পরিচিত। ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন এসি মিলান ৬ বার জেতা ইংলিশ প্রতিপক্ষকে আতিথেয়তা দেবে নিজেদের মাঠে। শুরুতেই বড় ম্যাচ নিয়ে বেশ খুশিই শোনা গেছে মিলান কোচ পাওলো ফনসেকার কণ্ঠ, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন সংস্করণ আমার পছন্দ হয়েছে। এবার বড় বড় ম্যাচের সম্ভাবনা বাড়বে।’

জানেন কি

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ২০০৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে প্রথমার্ধেই ৩–০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল এসি মিলান। তবে দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল ঘুরে দাঁড়িয়ে ৭ মিনিটের মধ্যেই তিন শোধ করে। পরে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে শিরোপা জেতে লিভারপুল। এটি ছিল ১৯৬২ সালের বেনফিকা–রিয়াল মাদ্রিদ (৫–৩) ম্যাচের পর সবচেয়ে বেশি গোলের ইউরোপিয়ান ফাইনাল।
রিয়াল মাদ্রিদ–স্টুটগার্ট

গত মৌসুমে সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ আর ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ১৫তম চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। এবার প্রথম ম্যাচেই আরেক জার্মান ক্লাব স্টুটগার্ট। বায়ার্ন, বরুসিয়ার তুলনায় স্টুটগার্ট অবশ্য ‘পুঁচকে’ই, ২০১০ সালের পর এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লীগে ফিরেছে। কোচ সেবাস্তিয়ান হোয়েনেস তাই রিয়ালকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েই খুশি, ‘আমার দলের অনেক খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফ সদস্যদের কাছে রিয়ালের বিপক্ষে তাদেরই মাঠে খেলাটা ইচ্ছাপূরণের মতো।’

জানেন কি

চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে সর্বশেষ ১৩ ম্যাচ অপরাজিত রিয়াল মাদ্রিদ। এ সময়ে জিতেছে ১০টি, ড্র ৩টিতে।
বায়ার্ন মিউনিখ–দিনামো জাগরেব

চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ২০ বছর ধরে মৌসুমের প্রথম ম্যাচে হারেনি বায়ার্ন মিউনিখ। এমনকি গ্রুপ পর্বে টানা ৪০ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ৬ বারের চ্যাম্পিয়নরা। সেই বায়ার্নই এবার শুরুটা করছে নিজের মাঠে, প্রতিপক্ষ ক্রোয়াট ক্লাব দিনামো জাগরেব। গত মৌসুমে বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়া ক্লাবটি এবার মূল পর্বে ফিরেছে এক মৌসুম বিরতির পর।

জানেন কি

বায়ার্ন ও জাগরেব ২০১৫–১৬ মৌসুমেও গ্রুপ পর্বে খেলেছিল। সে বার দুই লেগ মিলিয়ে ৭–০ গোলে জিতেছিল বায়ার্ন, যার মধ্যে ৫ গোলই ছিল রবার্ট লেভানডফস্কির।
জুভেন্টাস–আইন্দহফেন

টানা ১১ আসর মূল পর্বে খেলার পর ২০২৩–২৪ আসরে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারেনি জুভেন্টাস। এবার তুরিনে প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ গত বছর শেষ ষোলোয় খেলা আইন্দহফেন। ডাচ ক্লাবটির কোচ পিটার বোচ লিগ পর্বের ড্রয়ের দিন বলেছিলেন, ‘জুভেন্টাস, লিভারপুলের মতো বড় দলের বিপক্ষে কেমন খেলি, দেখা যাক। আর এবার নতুন সংস্করণ হওয়ায় কত পয়েন্ট হলে পরের ধাপে যাওয়া যাবে সেটাও স্পষ্ট নয়।’

জানেন কি

দুই দলই চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রায় নিয়মিত। কিন্তু ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হচ্ছে এই প্রথম।
ইয়ং বয়েজ–অ্যাস্টন ভিলা

৪১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরেছে অ্যাস্টন ভিলা। ১৯৮১–৮২ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ জেতা ইংলিশ ক্লাবটি গত বছর উনাই এমিরির অধীন প্রিমিয়ার লিগে চতুর্থ হয়েছিল। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিশ্চিতের পর তখনই নতুন ইতিহাস লেখার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এমিরি, ‘আমরা নতুন ইতিহাস লিখতে চাই, গড়তে চাই নতুন কিছু।’ ভিলা প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে ইয়ং বয়েজ, যে দলটি লিগ পর্বে জায়গা করেছে প্লে–অফে গ্যালাতাসারাইকে হারিয়ে। গত আসর শেষ করেছিল গ্রুপ পর্বের ৬ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে।

জানেন কি

উয়েফার প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত দশবার ইংলিশ ক্লাবের বিপক্ষে খেলেছে ইয়ং বয়েজ। এর মধ্যে জয় দুটিতে, ড্র–ও দুটি। হারই ছয়টিতে।
স্পোর্তিং লিসবন–লিল

পরের ম্যাচ ডে–তে স্পোর্তিং যাবে পিএসভি আইন্দহফেনের মাঠে, আর নিজেদের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদকে আতিথেয়তা দেবে লিল। বড় ম্যাচের আগে পর্তুগিজ ও ফরাসি দুই ক্লাবের নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার সেরা সুযোগই এটি। স্পোর্তিং অবশ্য গত আসরেই শেষ ষোলোয় খেলেছে। লিল প্রথম পর্ব টপকাতে পেরেছে সর্বশেষ ২০২১–২২ মৌসুমে।

জানেন কি

সর্বশেষ তিন ফুটবল মৌসুমেই ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার নকআউটে খেলেছে স্পোর্তিং। একবার চ্যাম্পিয়নস লিগে, দুবার ইউরোপা লিগে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.