চোখের সামনে মায়ের বন্দুকের গুলিতে বাবাকে খুন হতে দেখেছেন এই অভিনেত্রী

0
17
শার্লিজ থেরন। ছবি: তারকার ফেসবুক থেকে

অস্কারজয়ী অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন এর আজ ৫০তম জন্মবার্ষিকী। তাঁর ইচ্ছা ছিল নাচ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার। পরে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হলেও অভিনয়ে নিজেকে খুঁজে পান। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ইতালি ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হন। কেমন ছিল অভিনয়ের পথের সংগ্রামের গল্প, সেগুলোই আইএমডিবি থেকে তুলে ধরা হয়েছে।

থেরনের শৈশব কাটে দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে থেরনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বোর্ডিং স্কুলে। সেখানেই তাঁর প্রথম শিল্পচর্চার প্রতি ভালোবাসা জন্মে। চেয়েছিলেন নাচ নিয়ে থাকতে। পরে মডেলিং শুরু করে বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে ডাক পান। থেরন তখনো মডেলিং, নাকি অভিনয়—এ নিয়ে দোটানায় ছিলেন।

মডেলিং প্রতিযোগিতায় ইউরোপ

থেরন প্রথম মডেলিংয়ের কাজে ইউরোপে আসেন। ইতালির একটি প্রতিযোগিতায় নাম লেখান। পরে এক বছর মাকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন ইউরোপের বিভিন্ন শহরে। সেখান থেকে চলে আসেন নিউইয়র্কে। সেখানে ব্যালে নৃত্যশিল্পী হিসেবে নাম লেখান। শার্লিজ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি তিন দিনের মডেলিংয়ের কাজে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম। সেখানে এসে বন্ধুর বাসায় পুরো একটি শীত কাটিয়ে দিই। যে বাসায় থাকতাম, সেখানে কোনো জানালা ছিল না। কিন্তু আমি ব্যালে নৃত্য শিখতে আগ্রহী হয়েছিলাম। যে কারণে ধৈর্য ধরেছি। পরে যখন হাঁটুতে চোট পেলাম, তখন মনে হলো আমাকে দিয়ে এই নৃত্য হবে না। এদিকে মা বলছিলেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে চান। আমার নিজের সিদ্ধান্ত আমার ওপরই চাপিয়ে দেন। কী করব তখন, সব মিলিয়ে আমি ডিপ্রেশনে পড়ে যাই।’

শার্লিজ থেরন। ছবি: এএফপি
শার্লিজ থেরন। ছবি: এএফপি

৩০০ ডলার নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস

তিনি ১৯৯৪ সালে মায়ের সঙ্গে জন্মভূমিতে না গিয়ে মায়ের দেওয়া ৩০০ ডলার নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসেন। ফেরার মতো কোনো টাকা ছিল না। হাতে থাকা ৩০০ ডলার অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এমনও দিন গেছে, তিনি রেস্তোরাঁ থেকে রুটি চুরি করে খেয়েছেন। এভাবে টিকে থাকা তাঁর পক্ষে কষ্টসাধ্য। সঙ্গে মায়ের পাঠানো চেক ছিল। সেগুলো ভাঙানোর জন্য একদিন হলিউড বুলেভার্ড এলাকার ব্যাংকে যান। কিন্তু চেকগুলো ভাঙাতে ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন। এ নিয়ে ব্যাংকেই ঝগড়া শুরু করে দেন। এ সময় হঠাৎই তাঁর পেছনে থাকা জন ক্রসবি নামের একজন গ্রাহক তাঁকে একটি ব্যবসায়িক কার্ড হাতে ধরিয়ে দেন ও চেকটিও ভাঙিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এই ক্রসবি মূলত তরুণ অভিনয়শিল্পী, পরিচালক, গায়ক–গায়িকাদের কাজ খুঁজে দিতেন।

শার্লিজ থেরন। ছবি: এএফপি
শার্লিজ থেরন। ছবি: এএফপি

হলিউডে ভাগ্য ফেরে

ক্রসবিই তাঁকে প্রথম ফিল্ম স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর ক্রসবির সহায়তায় তিনি প্রথম একটি ভৌতিক সিনেমায় নাম লেখানোর সুযোগ পান। সিনেমার নাম ‘চিলড্রেন অব দ্য কর্ন ৩: আরবান হার্ভেস্ট’। সিনেমায় থেরনের কোনো সংলাপ ছিল না। পরে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে অনেকের চোখে পড়েন। কারণ, তাঁর উচ্চতা ছিল বেশি। দেখতেও সুন্দরী। অভিনয়েও নিজেকে প্রতিনিয়ত দক্ষ করে তোলেন। এক বছর পরেই ‘ডেভিলস অ্যাডভোকেট’ সিনেমায় আল পাচিনোর সঙ্গে পর্দা ভাগের সুযোগ তাঁকে হলিউডে ক্যারিয়ার গড়তে অবদান রাখে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ‘সুইট নভেম্বর’, ‘দ্য ইতালিয়ান জব’, ‘মনস্টার’সহ ব্যবসাসফল সিনেমায় নাম লেখান। মনস্টার সিনেমার জন্য ২০০৪ সালে অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়ে যান। একসময় হয়ে ওঠেন হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া তারকার একজন। প্রতিটি সিনেমায় কোটি ডলার পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনায় আসেন এই ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার নায়িকা।

৮৯তম অস্কারের লালগালিচায় মার্কিন অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন। ছবি: এএফপি।
৮৯তম অস্কারের লালগালিচায় মার্কিন অভিনেত্রী শার্লিজ থেরন। ছবি: এএফপি।

দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ক্যারিয়ার

শৈশবে একটি ঘটনা তাঁকে প্রায়ই ট্রমার মধ্যে নিয়ে যায়। বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎকারে তিনি সে ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, ঘটনাটি তিনি কখনোই ভুলতে পারেননি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৫ বছর। থাকতেন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। দিনটি ছিল ২১ জুন, ১৯৯১ সাল। থেরনের বাবা সেদিন মাতাল হয়ে বাসায় আসেন। তাঁর হাতে ছিল বন্দুক। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্ত্রী ও মেয়েকে হুমকি দিতে থাকেন। স্ত্রীকে আঘাত করেন। একসময় স্ত্রী ও মেয়েকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়েন। নিজেদের রক্ষা করতে একসময় হাতে পিস্তল তুলে নেন থেরনের মা, বাঁচার জন্য পাল্টা গুলি ছোড়েন। গুলিতে থেরনের বাবা মারা যান। আত্মরক্ষার্থে গুলি, তাই বেকসুর খালাস পেয়ে যান থেরনের মা। কিশোরী বয়সের সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে তিনি মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তাঁর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৭ আগস্ট।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.