চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম দুই হাতের চামড়া ফেটে যাচ্ছে: অভিনেত্রী শারমিন আঁখি

0
138
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান অভিনেত্রী শারমিন আঁখি

রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা শেষে আজ মঙ্গলবার বাড়ি ফেরেন শারমিন আঁখি। এর আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার জার্নিটা খুব কষ্টের ছিল। নিশ্বাস চলে যাওয়া কী জিনিস, তা অনুভব করেছি। আইসিইউতে মাঝেমধ্যে মনে হতো আর ফেরত আসব না। তবে চিকিৎসক ও নার্সরা পাশে ছিলেন বলেই সাহস পেয়েছি। চিকিৎসকেরা আমাকে বাঁচাতে কষ্ট করছেন, তা দেখে মনে হতো আমাকেও বাঁচার জন্য চেষ্টা করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা চেয়েছেন আর চিকিৎসকদের অসিলায় আমি নতুন জীবন পেয়েছি। আমার নতুন জীবনের বয়স দুই মাস।’

২৮ জানুয়ারি মিরপুরের একটি শুটিংবাড়িতে বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হয়েছিলেন অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। সেদিনই তাঁকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেই বিস্ফোরণে আঁখির হাত, পা, চুলসহ ৩৫ শতাংশ পুড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ নানান জটিলতায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ঘুরে আজ তিনি বাড়ি ফিরছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আঁখির পাশে ছিলেন আঁখির স্বামী নাট্য নির্মাতা রাহাত কবির। চিকিৎসকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালটির সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন, পরিচালক অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল, সহকারী পরিচালক হোসাইন ইমাম, সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ এবং রেজিস্ট্রার সোহানা আরজু।

 চিকিৎসকের মুচকি হাসিও অনেক সাহস দিত শারমিন আঁখিকে

চিকিৎসকের মুচকি হাসিও অনেক সাহস দিত শারমিন আঁখিকে

সংবাদ সম্মেলনে শারমিন আঁখি চিকিৎসক সোহানা আরজুর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই চিকিৎসকের মুচকি হাসিও অনেক সাহস দিত। অ্যানেসথেসিয়া ছাড়া ড্রেসিং করার আগে খুব ভয়ে ছিলাম, এই চিকিৎসক আমার পছন্দের একটি গান গাচ্ছিলেন তখন। সেই গান শুনে ব্যথা কমে যায়।’

শারমিন আঁখি জানান, চিকিৎসার অংশ হিসেবেই তাঁকে সূর্যের আলো, লাইট এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরের পর্দা এমনভাবে লাগাতে হবে, যাতে ঘরে বাইরের আলো না ঢুকতে পারে। পুরো অন্ধকার জগতে থাকতে হবে ছয় মাস। এ অবস্থা জানার পর হাসপাতালের কেবিন থেকে বের হয়ে সূর্যের আলো গায়ে মেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন।

চিকিৎসার অংশ হিসেবেই তাঁকে সূর্যের আলো, লাইট এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরের পর্দা এমনভাবে লাগাতে হবে, যাতে ঘরে বাইরের আলো না ঢুকতে পারে। পুরো অন্ধকার জগতে থাকতে হবে ছয় মাস।

শারমিন আঁখি বললেন, ‘আমার সামনের যুদ্ধটা আরও কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করি, সামনে নিশ্চয়ই ভালো কিছু আছে।’ শারমিন আঁখি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে জানাতে। একইভাবে তিনি সবার মধ্যে ফিরে এসেছেন এটা জানানোর জন্যও। তবে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের কয়েকজন বিস্ফোরণের ঘটনা কেন ঘটল, গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ধূমপান থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত—এটা সম্পর্কে আঁখি কী বলতে চান, এ ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন।

এ ধরনের প্রশ্নে শারমিন বলেন, হাসপাতালে আইসিইউতে থাকার সময় তিনিও শুনতে পেয়েছেন এ ধরনের খবরের কথা। বললেন, ‘তখন মনে হয়েছে মারা গেলে ব্লেম (দোষ) নিয়ে মরতে হবে। আমি সরাসরি কথা বলি। কেউ আঁচড় দিতে আসলে তা তাঁকে করতে দেব না। এগুলো নিয়ে ভয় পেলে আজ আপনাদের সামনে আসতাম না। পোড়া হাত, পোড়া চেহারা দেখাতাম না। নায়িকারা মেকআপ ছাড়া বাইরেই আসতে চান না। আমার নামে কুৎসা রটানো হয়েছে।’ বিস্ফোরণের ঘটনাটি দুর্ঘটনা ছিল, এটি পরিকল্পিত কোনো ঘটনা না।

অভিনেত্রী শারমিন আঁখি

অভিনেত্রী শারমিন আঁখি

দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শারমিন আঁখি বলেন, ‘শাড়ি পরতে হবে, তাই শাড়ি পরার আগে ওয়াশরুমে যাই। স্পার্ক হচ্ছে মনে হলো। গ্যাসের আগুনের মতো নীলচে কিছু দেখলাম। যখন বুঝতে পারলাম আগুন, সঙ্গে সঙ্গে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম। বিস্ফোরণ হলো। দরজার অস্তিত্ব বলতে কিছু ছিল না। বাথরুমের কমোড থেকে বাইরে ছিটকে পড়ি। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম দুই হাতের চামড়া ফেটে যাচ্ছে।’

ধূমপানের প্রসঙ্গে শারমিন আঁখি বলেন, ‘স্মোকিং থেকে যদি আগুনের সূত্রপাত হয়েও থাকে, সবাই কেন স্মোকিংটাকেই ইস্যু করছে? বিস্ফোরক তো সেখানে ছিলই। আমি এখনো ট্রমার মধ্যে আছি। চোখের সামনে এখনো সব দেখতে পাই।’

সংবাদ সম্মেলনে আঁখির স্বামী নাট্য নির্মাতা রাহাত কবির বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিগারেটের প্যাকেট, সিগারেটের টুকরা, লাইটারের ছবি দেখেছি। লাইটারটা গলেনি। প্যাকেট পুড়েনি। এগুলো কেন অক্ষত থাকল তা হাউস মালিকের কাছে জানতে চান। একই ঘটনা অন্য শুটিং হাউসে ঘটতে পারে। জবাবদিহির জায়গা তৈরি করতে হবে। দুর্ঘটনার পর থেকে ওই হাউসে প্রতিদিন শুটিং হচ্ছে।’

সুস্থ হওয়ার পর শারমিন আঁখি।

সুস্থ হওয়ার পর শারমিন আঁখি। 

দুর্ঘটনার পর মামলা না করা প্রসঙ্গে নাট্য নির্মাতা রাহাত কবির বলেন, শারমিন আঁখি মৃত্যুসজ্জায় ছিলেন। তখন অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে তাঁকে বাঁচানোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ ছাড়া আঁখি এবং তাঁর দুটো সংগঠন আছে, সেখানে তাঁরা বিষয়টি জানাবেন। তারপর মামলা করবেন কি না, তা সিদ্ধান্ত নেবেন। আর এখন শারমিন অনেকটাই সুস্থ, তিনি নিজেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা চিকিৎসক, রোগী নিয়ে কাজ করি। ১৫ শতাংশ পুড়লেই তাঁকে ডেঞ্জারাস (ভয়াবহ) বলি। সেই জায়গায় ৩৫ শতাংশ পোড়ার পর যুদ্ধ শেষে আজ শারমিন আঁখি বাড়ি ফিরছেন, এটা চিকিৎসকদের জন্য আনন্দের বিষয়। ঢাকা শহরে আগুনের ঘটনা ঘটছে, পরিত্রাণ পেতে হবে। আগুনের ঘটনায় আমরা অনেককে বাঁচাতে পারি না। আগুন প্রতিরোধে আমাদের সচেতন হতে হবে। সজাগ না হলে এর শিকার যে কেউ হতে পারে।’

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন শারমিন আঁখি। নাটক, বিজ্ঞাপন, স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ও মডেলিংয়ের পর ২০১৮ সালে নাম লেখান সিনেমায়। আঁখির বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানে মঞ্চনাটকের দল ‘অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়’-এ অভিনয়ে হাতে খড়ি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.