প্রবাদ আছে– ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনি।’ এবার এমন এক চোরের সন্ধান মিলল, যে চুরি করার টার্গেট নিয়ে নেমে ফাঁদ পেতে বিয়েও করে! আল-আমিন দেওয়ান আযান নামের ওই চোর প্রথমে ফেসবুকে ফাঁদ পাতে। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে নারী ক্রিকেটার তানিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর পর অল্প দিনের মধ্যে তানিয়ার আস্থা অর্জন করে সে। ফেসবুকে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় গত ১২ ডিসেম্বর তারা বিয়ে করে। ক্রিকেটার তানিয়া ঢাকা লিগে খেলছেন।
এদিকে প্রায় তিন বছর ধরে তানিয়াসহ চার নারী ক্রিকেটার রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছেন। অন্য তিনজন হলেন– জাতীয় দলের খেলোয়াড় স্বর্ণা আক্তার, অনুরা ও আনিশা। তারা চারজন ‘বোনের’ মতো চলাফেরা করেন। একে অপরকে বিপদ-আপদে আগলে রাখেন। তানিয়া বিয়ে করার পর ওই ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু তানিয়ার বিয়ের পর তারা যে ঘটনার মুখোমুখি হন, তা যেন কল্পনাকে হার মানায়।
গত সোমবার দুপুর থেকে উধাও তানিয়ার স্বামী আল-আমিন। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল ফোন। গা-ঢাকা দেওয়ার আগে নারী ক্রিকেটারদের বাসা থেকে সব চুরি করে নিয়ে গেছে সে। দামি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, চেক বই ও ব্যাংকের কার্ড নিয়ে লাপাত্তা ‘নতুন জামাই’। এ ঘটনায় বিস্মিত তারা চারজনই। যন্ত্রণাদায়ক সময় পার করছেন ক্রিকেটার তানিয়া। বুঝতে পারছেন, অল্প দিনের পরিচয়ে বিয়ে করে ফেঁসে গেছেন।
জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমরা চার ক্রিকেটার একসঙ্গে থাকছি। বয়সে একটু বড় হওয়ায় তানিয়াকে আপু ডাকি। কয়েকদিন আগে হঠাৎ আপুর সঙ্গে আল-আমিন নামে একজনের ফেসবুকে পরিচয় হয়। তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তানিয়া। এর পর তাড়াহুড়া করে গত ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারা। তানিয়ার বোনও বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিলেন।’ স্বর্ণা আরও বলেন, আল-আমিন আমাকে ‘ছোট বোন’ ডাকতে শুরু করে। অমায়িক ব্যবহারের কারণে আমরা তাকে শ্রদ্ধা করতে শুরু করি। আমাদের ফ্ল্যাটেরই একটি কক্ষে তানিয়া স্বামীকে নিয়ে থাকতেন।
ক্রিকেটার স্বর্ণা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অনুশীলন করার জন্য তারা খেলাঘর মাঠে যান। সেখানে তানিয়াসহ সবাই অনুশীলন করছিলেন। হঠাৎ সেখানে হাজির হন আল-আমিন। ভালো ছবি ও ভিডিও করে দেওয়ার কথা বলে স্বর্ণার ব্যাগে হাত দেন। আইফোন-১৩ প্রো ও আইফোন-১৩ মিনি মডেলের দুটি ফোন ব্যাগ থেকে বের করে নিয়ে ভিডিও এবং ছবি তুলতে থাকেন। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর স্বর্ণা দেখেন মাঠে তানিয়ার স্বামী নেই! কল করলে তার দুটি ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের মূল দরজায় তালা। দারোয়ানকে খবর দিয়ে সেই তালা খোলেন। তখনও তারা বুঝতে পারেননি কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে। ভেতরে ঢুকে দেখেন, পুরো বাসা এলোমেলো। ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ারের তালা ভাঙা। ড্রয়ারে ছিল স্বর্ণার ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, যা নেই। তানিয়ার ব্যাগের টাকারও নেই। এ ছাড়া তাঁর ব্যাংকের চেক বই, ভিসা কার্ড– কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
এই ঘটনার পর তানিয়া ভেঙে পড়েছেন জানিয়ে স্বর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যে ঘটনা চোখের সামনে ঘটে গেল, তা চারজনের কেউ বিশ্বাস করতে পারছি না!’ প্রতারক আল-আমিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এমন বাজে লোকের সঙ্গে তানিয়া সম্পর্ক রাখবেন– প্রশ্নই ওঠে না। অন্য কোনো মেয়ে যাতে তার শিকার না হয়, তা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।’
এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার। এরই মধ্যে পুলিশ, র্যাবসহ একাধিক সংস্থা প্রতারক আল-আমিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। আল-আমিনের নামে জালিয়াতির একাধিক মামলা থাকার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অভিনব প্রতারণার ঘটনাটি জানার পরপরই প্রতারককে গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করেছে র্যাব। দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহাদ আলী বলেন, ‘চুরির সঙ্গে যে জড়িত, সে এক ক্রিকেটারের স্বামী। তাকে ধরতে একাধিক টিম কাজ করছে।’