মার্কিন-চীন লড়াইয়ে এশিয়ার দেশগুলো কোনো পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন। এ ধরনের বিভাজনকে তিনি ‘বিপর্যয়কর’ আখ্যা দিয়েছেন।
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন (এপিইসি) অনুষ্ঠিত হবে। সেই সম্মেলনের আগে এক বক্তৃতায় ইয়েলেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করা ‘বাস্তবসম্মত নয়’—এশিয়ার সরবরাহব্যবস্থার জটিলতা ও এই অঞ্চলের সঙ্গে চীনের গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তা সম্ভব নয় বলে তাঁর মত।
জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র চীনে বিভিন্ন প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভূরাজনীতি ঢুকে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে জ্যানেট ইয়েলেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে এ কথা বলেছেন।
ইয়েলেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোপুরি চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলে বা এমন কোনো পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি করা হয় যেখানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো কোনো পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য হবে, সে ধরনের পরিস্থিতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকে ঝুঁকির উপাদান দূর করা ও তাকে আরও বহুমুখী করার চেষ্টা করছে। সে জন্য দেশীয় উৎপাদনে বিনিয়োগ করাসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করা হচ্ছে।
ইয়েলেনের বক্তব্য পরিষ্কার: যুক্তরাষ্ট্র নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চায়, কিন্তু তা চীনের প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়।
সম্মেলনের আগে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক গভীরতর করার অঙ্গীকার করেছেন ইয়েলেন। তিনি বলেন, সরবরাহব্যবস্থা আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর করতে চায় এবং সেই সঙ্গে এসব দেশে রপ্তানি বাড়াতে চায়।
ইয়েলেন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে যে দাবি করা হয়, তা ভিত্তিহীন।
বাইডেন প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর প্রসপারিটি (আইপিইএফ) শীর্ষক উদ্যোগ নিয়ে সপ্তম পর্যায়ের আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে, আপেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় যেন কিছু ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়।
আইপিইএফ ঠিক সাধারণ মুক্তবাণিজ্য চুক্তির মতো নয়, সেখান থেকে তার অবস্থান অনেক দূরে। বাইডেন প্রশাসন মূলত এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে এই চুক্তি করেছে, সেই সঙ্গে তাদের সামনে চীনের বিকল্প কিছু হাজির করাও তাদের লক্ষ্য।
এই অঞ্চলের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন হলে যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল উভয়ই লাভবান হবে। ইয়েলেন বলেন, ২০২২ সালে পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৮ হাজার কোটি ডলার, ২০১৯ সালের তুলনায় যা ২৫ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি–বাণিজ্যের ২৫ শতাংশের গন্তব্য এই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল।
২০১৮ সালে মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে। কোভিড মহামারি শুরুর পর তা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
কোভিড মহামারির সময় সরবরাহব্যবস্থায় এককভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে সরবরাহব্যবস্থায় ঘাটতি তৈরি হয়। সেই সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ দেশ থেকে পণ্য নেওয়ায় জোর আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই কৌশলের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দো-ইউরোপীয় দেশ উভয়ই লাভবান হবে।