চীনা তারকা ঝাও লুসি লিখলেন, ‘আমি শেষ’

0
6
চীনা অভিনেত্রী ঝাও লুসি নিজের ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবার আলোচনায় এসেছেন চীনা অভিনেত্রী ঝাও লুসি। ‘হিডেন লাভ’–খ্যাত এই তারকা অবশেষে নিজের ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। অভিযোগ করেছেন শোষণ, প্রতারণা আর উপেক্ষার।

চুক্তির নামে চেপে বসা দায়

ঝাও জানান, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসকের কাছ থেকে জানতে পারেন, তিনি গুরুতর বিষণ্নতা ও উদ্বেগে ভুগছেন। তখন অনেক কাজ বাতিল করতে হয়, ব্র্যান্ড চুক্তিও বাদ যায় তাঁর। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে বলেছিল, সব দিক সামলে নেবে তারাই। কিন্তু পরে সব চাপ এসে পড়ে ঝাওয়ের ওপর।

ঝাও বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘আমার কাজ কমিয়ে দিতে হয়েছিল অসুস্থতার জন্য। ওরা বলেছিল সাহায্য করবে, কিন্তু শেষমেশ আমাকেই সব খেসারত দিতে হয়েছে।’ যে কারণে নিজের গড়া স্টুডিও নিয়েও এখন তাঁর হাত-পা বাঁধা। বহুদিন চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। পুরোনো টিম মেম্বারদের অনেকেই চলে গেছেন।

ভক্তরা ঝাও লুসিকে ভালোবেসে ‘রোসি’ নামে ডাকে
ভক্তরা ঝাও লুসিকে ভালোবেসে ‘রোসি’ নামে ডাকে, ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ঝাও অভিযোগ করেন, দুই বছর আগে অজান্তেই একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সই করে ফেলেন তিনি। সেটার সুযোগ নিয়ে তাঁর স্টুডিও থেকে সাড়ে ২০ লাখ ইউয়ান তুলে নেওয়া হয়েছে, কোনো আলোচনা ছাড়াই। তাঁর অর্থ ব্যবস্থাপককে নকল আয়ের কাগজে সই করানো হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি চুক্তি ভাঙার চেষ্টা করতেই উল্টো ভয় দেখানো হয়। ঝাও এক পর্যায়ে এটাও বলেছেন, গ্যালাক্সি কুয়ু মিডিয়া জানিয়েছে, ‘আমি কথা বললে আমাকে বিনোদনজগতে ব্ল্যাকলিস্টেড করা হতে পারে। চুপ থাকাটাই নাকি ভালো…এটা কী ধরনের সমাধান?’

মানসিক স্বাস্থ্যের প্রমাণ

ঝাও শুধু অভিযোগ করেই থেমে যাননি, নিজের মেডিকেল রিপোর্টও প্রকাশ করেছেন। ১৬ জুলাই ২০২৫ সালে তিনি জিউজিয়াং শহরের এক মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করান। রিপোর্টে দেখা যায়, তাঁর উদ্বেগের স্কোর ছিল ৭৩, যা ক্লিনিক্যাল মানদণ্ডে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ হিসেবে ধরা হয়।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি—সব মিলিয়ে ঝাও এখনো এক সংকটময় অবস্থায় আছেন।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি—সব মিলিয়ে ঝাও এখনো এক সংকটময় অবস্থায় আছেন
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের ঘাটতি—সব মিলিয়ে ঝাও এখনো এক সংকটময় অবস্থায় আছেন, ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

বিপদে পড়লে পুলিশের কাছে যাও

অন্য কেউ যেন এমন পরিস্থিতিতে না পড়ে, সে কারণে ঝাও পোস্টের একদম শেষে লিখেছেন, ‘আমার ভেতরটা পচে গেছে, আর আমার কোনো সম্মান নেই। কিন্তু আমাকে ব্ল্যাকলিস্টেড করার দরকার নেই, আমি নিজের ইচ্ছাতেই থেমে যাচ্ছি। আমি শেষ। যদি তখনই পুলিশের কাছে যেতাম, যদি সে বছরই অভিযোগ করতাম, আজ আর কেউ এই অন্যায়কে “আইনি” বলে চালাতে পারত না।’
ঝাও আরও বলেন, ‘তাই বলছি, যদি কখনো বিপদে পড়েন, দয়া করে কারও মিষ্টি কথায় ভুলে যাবেন না। অনেক সময় সেই কথার ভেতরেই লুকিয়ে থাকে প্রতারণা। সবচেয়ে জরুরি হলো, ভয় না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে যান। দেরি না করে জানান, অভিযোগ করুন।’

‘ফ্রিডম ফর রোসি’

ভক্তরা ঝাও লুসিকে ভালোবেসে ‘রোসি’ নামে ডাকে। তাঁর এই ভক্তদের অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ঝাওয়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবার ভাইরাল হয়েছে হ্যাশট্যাগ জাস্টিসফরঝাওলুসি (#JusticeForZhaoLusi)। একজন লিখেছেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে ঝাও লুসির ওপর। তাঁদের সব আয়ের বড় অংশ আসে লুসির কাজ থেকে। অথচ তাঁকেই এখন এমনভাবে ব্যবহার করছে! এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
আরেকজন ভক্তের কণ্ঠে ছিল আহ্বান, ‘চুক্তি এখনই বাতিল করতে হবে। আমরা ঝাওয়ের পাশে আছি।’

কোনো কোনো তারকার জীবন বাইরে থেকে যতটা ঝলমলে দেখায়, ভেতরের গল্পটা ঠিক উল্টো। ঝাও লুসির এই সাহসিকতা হয়তো আরেকজনকে

সাহস দেবে নিজের সম্মান রক্ষা করতে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস

রয়া মুনতাসীর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.