চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যু

0
16
সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন গতকাল বিকেলে, মগবাজারের একটি হোটেলে উঠেছিলেন তাঁরা। অসুস্থ হয়ে আজ তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে অসুস্থ ছেলে নাঈম হোসেনের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন ও স্বপ্না আক্তার দম্পতি। গতকাল শনিবার মগবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন তাঁরা। রাতে খাবার খেয়ে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে এক আত্মীয়কে জানান। আজ রোববার দুপুরে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে খাবারের বিষক্রিয়ায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমের চিকিৎসার জন্য শনিবার পরিবারটি ঢাকায় আসে। গ্রামে থাকলেও ঢাকার পোস্তগোলা এলাকায় মনির হোসেনের একটি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে। বাড়িটি দেখভাল করেন রফিকুল ইসলাম। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই মগবাজারের হোটেল ‘সুইট স্লিপে’ আসেন তাঁরা। পাশের একটি খাবারের হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়েছিলেন। পরে রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

হোটেল সুইট স্লিপের সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শনিবার বিকেলে মনির হোসেন তাঁর প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে আসেন। রফিকুল ইসলাম নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে হোটেল ভাড়া করেন। হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে, সন্ধ্যার দিকে একটি ব্যাগে করে খাবার নিয়ে আসেন রফিকুল। পরে তিনি চলে যান। রাত আটটার দিকে মনির হোসেন নিচে নামেন। পরে পানি নিয়ে ওপরে উঠে যান মনির।

আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, তাঁরা অসুস্থ হলেও হোটেলের কাউকে কিছু জানাননি। বেলা ১১টার দিকে রফিকুল তাঁর মেয়েকে নিয়ে হোটেলে আসেন। তিনি প্রথমে স্বপ্না আক্তারকে ধরে পাশের আদ দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে এসে মনিরকে একই হাসপাতালে নিয়ে যান। কক্ষে রফিকুলের মেয়ের চিৎকার শুনে হোটেলের কর্মচারীরা অচেতন অবস্থায় এই দম্পতির ছেলে নাঈমকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

আদ দ্বীন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্বরত চিকিৎসক সেলিম হোসেন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁরা মারা গেছেন। পরে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মনির হোসেনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সেরাজুল হক ব্যাপারী। মনিরের আরও দুই ছেলে রয়েছে। তাঁদের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে আসেন স্বপ্না আক্তারের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, খাবারের সঙ্গে কিছু খাইয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, রাতে বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে তিনজন খেয়েছিলেন। সেই খাবার খেয়ে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরা একজন আত্মীয়কে খাবার খাওয়ার পর বমি বমি লাগছে বলে জানিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটকে ডাকা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, মৃত ব্যক্তিদের ভিসেরা পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.