চা নাকি কফি, স্বাস্থ্যের জন্য কোনটা বেশি উপকারী?

0
11

বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে টং-এর দোকানে আড্ডায় প্রায়ই শোনা যায় পরিচিত একটি প্রশ্ন: চা নাকি কফি? অনেক সময় দ্বিধায় পড়তে হয়, আবার কেউ হেসে চট করে বলে দেন, ‘আমি চা খাই না, কফিই পছন্দ করি।’

কখনো কখনো এমন মধুর বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, কারণ একেকজনের পছন্দ একেকরকম। আচ্ছা, আপনার কখনো কি প্রশ্ন জেগেছে যে কোনটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী? যদি কখনো এভাবে না ভেবেও থাকেন, তাহলে আজ সেই উত্তর খুঁজে দেখবো।

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে কফি বা চা খাওয়া লোকেরা কিছুটা বেশি স্বাস্থ্যবান হতে পারে, কিন্তু ঠিক বলতে পারি না যে কফি বা চা খাওয়াই নিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্য ভালো করেছে কি না।

কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণে কফি ও চা স্বাস্থ্য উপকারিতার সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন ক্যাফেইনের কারণে। গবেষণায় দেখা গেছে, কফি ও চায়ের অন্যান্য উপাদানের চেয়ে ক্যাফেইনের প্রভাব বেশি। ক্যাফেইন সতর্কতা ও মনোযোগ বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এটি শারীরিক কার্যক্ষমতাও বাড়ায় এবং মানসিক মুডকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

কফিতে প্রতি আউন্সে চায়ের তুলনায় বেশি ক্যাফেইন থাকে। এজন্য অনেকেই ক্লান্তি অনুভব করলে চাঙ্গা হতে কফি বেছে নেন। সাধারণত ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ৮০–১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। চায়ের ক্যাফেইন পরিমাণ প্রকারভেদে ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিন টিতে সবচেয়ে বেশি ক্যাফেইন থাকে, প্রতি ৮ আউন্সে ৪০–৭০ মিলিগ্রাম। অন্যান্য চায়ে কম ক্যাফেইন থাকে, আর অনেক হার্বাল চায়ে প্রায় থাকে না।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন গ্রহণ নিরাপদ। অধিকাংশ গবেষণা পরামর্শ দেয়, দৈনিক প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন স্বাস্থ্যকর। তবে সামান্য পরিমাণ ক্যাফেইনও কিছু মানুষকে দুঃচিন্তায় ফেলতে পারে বা ঘুম ব্যাহত করতে পারে।

উভয় পানীয়েই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যেমন পলিফেনল থাকে, যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমাতে এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গ্রিন এবং ব্ল্যাক চায়েতে পলিফেনল পরিমাণ অন্যান্য চায়ের তুলনায় বেশি এবং কফির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাছাকাছি।

কফি পান করলে হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, বিষণ্ণতা এবং স্নায়ু সম্পর্কিত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কফি পান দীর্ঘায়ুর সঙ্গেও সম্পর্কিত।

তবে ভিন্ন ভিন্ন চায়ের কারণে স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে তুলনামূলকভাবে কম তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দ্যা জার্নাল অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম-এ প্রকাশিত একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক ২০০–৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইনযুক্ত চা বা কফি পান করলে ডায়াবেটিস, হৃদয়ের ধমনীজনিত রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

স্বাস্থ্যের জন্য কফি থেকে চায়ে যাওয়ার কোনো বিশেষ দরকার নেই। তবে সকালের পানীয়ে ভিন্নতা আনতে কিছু ক্যাফেইনযুক্ত চা চেখে দেখতে পারেন।

বিঃদ্রঃ এই তথ্য শুধুমাত্র পাঠকের জন্য তথ্যবহুল উদ্দেশ্যে লেখা। আপনার নিকটস্থ চিকিৎসক বা পেশাদার কারও পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়।

সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.