চাল কিনতে তিন দেশে মন্ত্রী-সচিব

0
208
চাল

সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে ২০ লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে। এর মধ্যেও চাল আমদানির আলোচনার জন্য তিন দেশ সফরে তাঁরা।

  • মন্ত্রী, সচিবসহ ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড সফরে।
  • ভিয়েতনাম থেকে চাল কেনা হচ্ছে বেশি দামে। তাদের খরচে কর্মকর্তারা সে দেশে গেছেন।

খাদ্যমন্ত্রী ও খাদ্যসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর কম্বোডিয়া সফর করে। সেখান থেকে ২৪ থেকে ২৭ নভেম্বর ভিয়েতনাম সফর করে প্রতিনিধিদলটি। বর্তমানে প্রতিনিধিদল থাইল্যান্ড সফরে রয়েছে। সে দেশ থেকে আগামী ১ ডিসেম্বর তাঁদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

অথচ ২০১১ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রী-সচিবসহ অন্য কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা জারি হয়েছিল। এতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব বা ভারপ্রাপ্ত সচিবদের একত্রে বিদেশ ভ্রমণ সাধারণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। জাতীয় স্বার্থে, বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদির বার্ষিক সভা, দাতাগোষ্ঠীর সভা হলে অত্যন্ত সীমিত ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হতে পারে।

এ ছাড়া চলতি মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৯ নভেম্বর জারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিজ নিজ সংস্থার ব্যয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সব সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশভ্রমণ বন্ধ থাকবে। বৈশ্বিক সংকট ও দেশে ডলার–সংকটের কারণে সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এ ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে দেশে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি নেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের সব শীর্ষ কর্মকর্তার একযোগে বিদেশ সফরে যাওয়া ঠিক হয়নি। এটি সরকারের ঘোষিত নীতির পরিপন্থী।

বিদেশ সফরে থাকায় গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবদের বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী ও সচিব উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠকে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। সভায় বলা হয়, দেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণে খাদ্য মজুত আছে। সরকারি গুদামে ১৬ লাখ টনের বেশি চাল ও গমের মজুত আছে। এই মজুত দিয়ে আগামী তিন-চার মাস দেশের সরকারি বণ্টনের চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের ভিয়েতনাম সফর নিয়ে এরই মধ্যে সে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা হ্যানয় মেইল–এ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াবে’ শীর্ষক খবরে বলা হয়, ভিয়েতনামের কৃষি ও গ্রাম উন্নয়ন উপমন্ত্রী বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে বৈঠক করেছে।

বৈঠক প্রসঙ্গে হ্যানয় মেইলকে ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ বলেন, কৃষিক্ষেত্রে ভিয়েতনামের কৃষি ও গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ কাজে লাগাবে। দুই দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও বাড়বে। দুই দেশের বাণিজ্য ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলেও তিনি আশা করেন।

প্রতিনিধিদলের সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সালমা মমতাজ বলেন, ‘তিন দেশ সফরে কী অর্জিত হয়েছে, আর কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। মন্ত্রী ও সচিব দেশে ফিরলে এ সম্পর্কে জানা যাবে।’ সফর নিয়ে তখন তাঁদের কাছে জানতে চাওয়ার পরামর্শ দেন ভারপ্রাপ্ত সচিব।

গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল কেনার চুক্তি করেছে। এ ছাড়া ভারত থেকে ১ লাখ টন ও মিয়ানমার থেকেও ২ লাখ টন চাল কেনা হচ্ছে। ভিয়েতনাম থেকে প্রতি টন সেদ্ধ চাল ৫২১ ডলার ও আতপ চাল ৪৯৪ ডলার দরে কেনা হচ্ছে। ভিয়েতনাম আতপ চাল নিজ দেশ থেকে দিলেও সেদ্ধ চাল থাইল্যান্ড থেকে কিনে দেবে।

ওই সময়ে ভিয়েতনাম ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চালের দাম ৪০০ ডলারের আশপাশে ছিল। চলতি সপ্তাহে তা ৪২৪ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর থাইল্যান্ডের চাল গত এক সপ্তাহে ৩ শতাংশ কমে ৪১০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চাল ৩৭১ ডলারে বিক্রি করছে। মিয়ানমার ও পাকিস্তানের প্রতি টন চালও ৪০০ ডলারের কমে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভিয়েতনাম থেকে বেশি দামে চাল কেনা হচ্ছে। এ অবস্থায় ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় খরচে খাদ্যমন্ত্রী, খাদ্যসচিবসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডলার ও রিজার্ভ–সংকটের এ সময়ে এভাবে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর একই সঙ্গে অন্যায় এবং নিয়মের লঙ্ঘন। ভিয়েতনাম থেকে বেশি দামে চাল কেনার অভিযোগ ওঠার পর আবার তাদের অর্থায়নে সে দেশ সফর করা একই সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত। এর মাধ্যমে বেশি দামে চাল কেনার অভিযোগ আরও শক্তিশালী হলো।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও খাদ্যসচিব মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তাঁদের মুঠোফোন কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁরা ফোন ধরেননি, খুদে বার্তা পাঠালেও তাঁরা সাড়া দেননি।

ইফতেখার মাহমুদ

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.