চট্টগ্রামের মহল মার্কেট বন্ধক রেখে ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৬০ কোটি টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমেদ। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তা খেলাপি হয়ে যায়। সুদে-আসলে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ৮৬ কোটি টাকা। অনেক দেনদরবার করেও ঋণের অর্থ আদায় করতে না পেরে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক। সেই মামলায় আদালত বন্ধকি মহল মার্কেটে কোতোয়ালি থানার ওসিকে রিসিভার নিয়োগ করেন। রিসিভার মার্কেটের ভাড়া তুলে তা ব্যাংকে জমা করতে শুরু করেন। ‘রিসিভার নিয়োগ’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরই খেলাপি ঋণ ফেরত দিতে বিদ্যুৎ গতিতে উদ্যোগী হন ঋণখেলাপি জসিম। বন্ধকি সম্পদ হাতছাড়া হওয়ার পরই মাত্র ৯ মাসের মাথায় ১ ফেব্রুয়ারি ঋণের ২৫ কোটি টাকা আদালতে জমা দিতে বাধ্য হন তিনি। বাকি ৩৫ কোটি টাকা তিন মাসে ফেরত দেওয়ার চুক্তি করেন।
শুধু রিসিভার নিয়োগই নয়; সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ ১২ বছর আগের রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মামলায় ১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করে জামিন পান চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোস্তফা গ্রুপের মালিক হেফাজতুর রহমান, জহির উদ্দিনসহ আট পরিচালক, চেয়ারম্যান ও এমডি। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়রি ১৮ বছরের পুরোনো ইসলামী ব্যাংকের ঋণখেলাপি মামলায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করে মেসার্স সিদ্দিকী অ্যান্ড কোম্পানি মামলা থেকে অব্যাহতি নেয়। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাইম ব্যাংকের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তিন ঘণ্টার মধ্যে ৭০ লাখ টাকা পরিশোধ করে জামিন নেন ছিদ্দিক ট্রেডার্সের মালিক আবু সাঈদ চৌধুরী। একইভাবে জেল খাটা থেকে বাঁচতে ১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ চোখ বুজে ফেরত দিতে বাধ্য হন ব্যবসায়ী তিন ভাই মোহাম্মদ হাসান, মহসীন ও সেলিম। সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর মেসার্স লোটাস করপোরেশনের মালিক তাঁরা।
রিসিভার নিয়োগ ও পরোয়ানার মতো দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরই ২২ বছর আগের ঋণখেলাপি মামলায় ৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করে মামলা থেকে অব্যাহতি নেন পাঁচ ব্যবসায়ী। গত ১৩ নভেম্বর আদালতে খেলাপি ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ করার রসিদ জমা দেন। তারপর দেশত্যাগে জারি করা নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার ও মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেন বিচারক। অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন– মেসার্স মোনাভী টেক্সটাইল কমপ্লেক্স লিমিটেডের পরিচালক ইদ্রিস মিনহাজ, ইলিয়াস মুরাদ, সামসুদ্দিন রিয়াদ, শামসুল আলম ফয়সাল ও ফারজানা মুরাদ। ১৯৯৯ সালে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দেননি তাঁরা। এভাবে চট্টগ্রামে ১০ বছর, ১৫ বছর ও ২২ বছর আগে মেরে দেওয়া ১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হলেন ৫৪২ ব্যবসায়ী। খেলাপি ঋণ পরিশোধে বাধ্য হওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে বনেদি শিল্প গ্রুপের মালিক, সংসদ সদস্যের স্বামী-শ্বশুর থেকে শুরু করে বড়-ছোট সব ব্যবসায়ীই রয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে বকেয়া পড়ে থাকা খেলাপি ঋণ মূলত রিসিভার নিয়োগ, সাজা পরোয়ানা জারি, দেওয়ানি সাজা, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও পাসপোর্ট জব্দ করার মতো কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ ফেরত দিতে বাধ্য হন তাঁরা।
আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম