মাছরাঙা টেলিভিশনে শুরু হয়েছে ‘অনলাইন অফলাইন সিজন টু’। সাগর জাহান পরিচালিত এ নাটকের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সালহা খানম নাদিয়া। নাটকটিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
সালহা খানম নাদিয়া : এ নাটকে আমার চরিত্রটি গোবেচারা টাইপের একজন মেয়ে, যে ভুল জায়গায় ভালোবেসে বিয়ে করে সমস্যায় পড়ে। তারপর নানা জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে। স্মাগলিং থেকে শুরু করে নানা অপরাধে তাকে ফাঁসানো হয়। তবে মেয়েটা খুবই ভালো পরিবারের।

সালহা খানম নাদিয়া : আমি খুব ফান লাভিং। আমার স্বামী এবং পরিবার ও আশপাশের সবাই মজার মধ্যে থাকতে ভালোবাসে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে এত চাপে থাকি, (তাই) যখন ফ্রি হই, বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট বানাই। এসব দেখে মানুষ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়, দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে। উপভোগ করি। বানানো কনটেন্ট ফেসবুক বা টিকটকে আপলোডের পর দেখি মানুষও খুব পছন্দ করে। প্রশংসা করে। তাহলে কেন নয়। যেটা আমরা উপভোগ করি, যেটা আমাদের কাজ, তা মানুষ পছন্দ করছে। এসব মোটেও চাপে থেকে নয়, মনের খুশিতে করি। অবশ্যই সময় পেলে।
প্রশ্ন: অভিনয় করছেন আবার টিকটক, রিলসেও সক্রিয়। এই দুই কাজের মধ্যে কি কোনো বিরোধ আছে?
সালহা খানম নাদিয়া : টিকটক, রিলসে আমি এখন থেকে নই। আমি এসব শুরু করি ২০১৫-১৬ সালের দিকে। আমার সার্কেলে আমরা ভাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এমনটা করি। অনেকের অনেক রকম শখ থাকে, যেমন কেউ ফুটবল খেলে, ক্রিকেট খেলে, হকি খেলে, পাশাপাশি অন্য কিছুও করে। আমারও পেশা অভিনয় ও মডেলিং, আর টিকটক ও রিলস শখ। এটার সঙ্গে অভিনয়ের কোনো বিরোধ দেখি না। এসব করে শান্তি পাই, তাই করি। আমার কাছে যখন নাটকের প্রস্তাব আসে, চ্যালেঞ্জিং হলে করি। এদিকে নতুনেরা এখন কাজ করছে, তাদের কারণে আমার ওপর একরকম চাপ কমেছে। আমি সিরিয়াল করছি, সেগুলোর জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে মনোনয়ন পাচ্ছি। পুরস্কারও পাচ্ছি। আমার কাজের কোনো কমতি হচ্ছে না। মাসে ২৪-২৫ দিন কাজ করছি। সত্যি কথা, আমার কোনো অবসর নেই। অভিনয়ের বাইরে যে সময়টা পাই, পারিবারিক ব্যবসা দেখছি। আমার স্বামীর ব্যবসাও দেখছি। পাশাপাশি একটা ব্র্যান্ডের সঙ্গেও যুক্ত আছি। এরপরও যদি সময় থাকে, অনেকে যেমন ঘোরাঘুরি করে, মুভি দেখে, আমরাও তা–ই (করি)। তবে আমরা রিলসও বানাই। কারণ, আমরা হাসতে খুব পছন্দ করি।

সালহা খানম নাদিয়া : কোনো আক্ষেপ হয় না। যে প্রাপ্য, সে-ই পেয়েছে। আমি তো ‘খুফিয়া’ ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ে তাদের না করেছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি এই চরিত্রের জন্য নই। এত খোলামেলা আমি আবার পর্দায় হতে পারি না। যাঁরা করেছেন, তাঁরা অনেক ভালো করেছেন। তাঁরা সাহসী অভিনেত্রী, তাঁদের সাধুবাদ। কিন্তু আমি এত বোল্ড চরিত্র করার মতো মনে হয় না নিজেকে কখনো তৈরি করব। আমি সেটাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। তাই এ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই।
সালহা খানম নাদিয়া : কাজ এ রকম অনেকই ছাড়া হয়। সময় মেলাতে না পারার কারণে অনেক কাজ করতে পারিনি। আমার বিয়ের সময়টায় ১০টির মতো নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ এসেছিল। দিস ইজ কলড ডেসটিনি। আল্লাহ হয়তো আমার জন্য ওই কাজগুলো রাখেননি। আমি তখন মানা করেছি। এসব নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। আমি কখনোই জীবনে হেরে যাওয়া ও থেমে যাওয়াকে কিছুই মনে করি না। আমার না হলে আরেকজনের হবে। আরেকজনের না হলে অন্য আরেকজনের হবে। আমি কখনো কোনো কিছু নিয়ে তাই হাহুতাশ করি না। আমার পরিবার আমাকে এমনটা শিখিয়েছে। আমি নিজেও এমনটা বিশ্বাস করি, হাহুতাশ করে কোনো লাভ নেই; বরং এতে অশান্তিই বাড়ে।

সালহা খানম নাদিয়া : এখন অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো করতে চাই। প্রস্তাবও পাচ্ছি। আমি নিজেও টুকটাক করছি। সামনে জানতে পারবেন।
প্রশ্ন: ভিকি জাহেদের আলোচিত ‘একটি খোলা জানালা’ ওয়েব ফিল্মে কাজ করেছিলেন। কিন্তু ওটিটিতে আপনাকে সেভাবে আর পাওয়া গেল না কেন?
সালহা খানম নাদিয়া : আসলে চরিত্রের প্রয়োজনে পরিচালকের যাঁকে ভালো লাগবে, তাঁকে নিয়ে কাজ করতে পারেন। হতে পারে তিনি পরিচালকের পূর্বপরিচিত বা তাঁদের সঙ্গে বেশি ওঠাবসা আছে—এমন কাউকে চরিত্রের জন্য বিবেচনা করবেন বা করেন। আবার পরিচালক যদি মনে করেন, না, আমি আমার বলয়ের বাইরে গিয়ে নাদিয়াকে কঠিন এই চরিত্রের জন্য কাস্ট করব, যদি তাঁরা ভেবে থাকেন, আমি একজন সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী, অনেকে আমাকে বলে আন্ডাররেটেড…। একজন নায়িকার কর্মজীবনে ১৪ বছর ধরে প্রধান চরিত্র করা চাট্টিখানি কথা নয়। এর মধ্যে অনেক নায়িকা আসবে–যাবে, যাবে–আসবে, এর মধ্যেও আমি ধারাবাহিকভাবে কাজ করছি এখনো; এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। কোনটায় আমি করতে পারলাম, কোনটায় পারলাম না, সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। তবে আমাকে যেখানে পরিচালক সুযোগ দিয়েছেন, আমি আমার ছাপ রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। পুরস্কারও পেয়েছি। আমার অভাব শুধু একটা সুযোগের। যদি সুযোগ আসে, ও রকম কোনো চিত্রনাট্য পাই, অবশ্যই করব। এসব নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। আমি অনেক কৃতজ্ঞ, যেসব পরিচালক আমাকে অনেক রকম চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। এখনো যাঁরা ভাবছেন না, তাঁদের বলব, লস আপনাদের হচ্ছে, আমার নই (হাসি)।