পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৭ প্রার্থীর কাছ থেকে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মাদারীপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) সুব্রত কুমার হালদারসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ের উপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে আজ বুধবার কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। সুব্রত কুমার হালদার বর্তমানে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে যুক্ত আছেন।
অন্য আসামিরা হলেন মাদারীপুর পুলিশ লাইনসের বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল মো. নুরুজ্জামান সুমন, জাহিদুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা পুলিশ হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পিয়াস বালা, মাদারীপুরের সাবেক টিএসআই (শহর উপপরিদর্শক) গোলাম রহমান ও মাদারীপুর সদর থানার বাসিন্দা মো. হায়দার ফরাজি।
মামলায় বলা হয়, সুব্রত কুমার হালদার ২০১৯ সালে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকাকালে নিয়োগসংক্রান্ত ওই দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ১৬১, ৪২০ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬ হাজার ৮০০ পুরুষ এবং ২ হাজার ৮৮০ নারীসহ মোট ৯ হাজার ৬৮০ জন কনস্টেবল নিয়োগের জন্য ২০১৯ সালের ২৮ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা রেঞ্জের অধীনে মাদারীপুর জেলায় সাধারণ পুরুষ ১৬ জন ও সাধারণ নারী ৩ জন এবং বিশেষ কোটায় ১৫ পুরুষ ও ২০ নারীসহ মোট ৫৪ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৬ জুন মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টআরসি) নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ৫৪ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। ওই নিয়োগ চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ ঘুষ লেনদেনের ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জব্দ করে পুলিশ। ওই ঘটনায় মাদারীপুর সদর থানায় ছয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে এবং আদালতের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, সাবেক পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার (৫২) চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে অপরাধমূলক আচরণের মাধ্যমে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সর্বমোট ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। এতে আসামিরা দণ্ডবিধির ১৬১, ৪২০ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বিধায় তাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলাটি করেছে।