চলতি বছরই দেশে চারটি ক্যান্সার হাসপাতাল চালু হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, এই চার ক্যান্সার হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসার জন্য দরকারি সব যন্ত্রপাতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানি করা হবে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) জনসংখ্যা ভিত্তিক ক্যান্সার পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, নিত্যনতুন জ্ঞান তৈরিতে গবেষণার বিকল্প নেই। বিএসএমএমইউ থেকে সেই গবেষণাই পরিচালনা করা উচিত, যা রোগীদের কল্যাণে কাজে আসে। যেসব গবেষণা দেশের মানুষের উপকার হবে, সেসব ক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
বিএসএমএমইউয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, জনগণের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল কোথায় ছাপা হয়, কী গবেষণা হয়, তা জানাতে হবে। গবেষণা হতে হবে মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে গবেষণা এগিয়ে নিতে পারে, তবে তা সাংঘর্ষিক হয়। তাই এটি এড়িয়ে প্রয়োজনে সাবেক শিক্ষার্থী এবং জনগণের কাছ অনুদানের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ওপর জোর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। তিনি বলেন, গণআকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এমন গবেষণার জন্য ফান্ডের কোনো সমস্যা হবে না। বিএসএমএমইউর উদ্যোগে পরিচালিত বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে।
অনুষ্ঠানে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ফল তুলে ধরেন পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান। তিনি জানান, বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের রোগী পাওয়া গেছে। প্রতি লাখে ১০৬ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। ৯৩ শতাংশ রোগীর বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২.৪ শতাংশ শিশুরা রয়েছে। ৫.১ শতাংশ রোগীর বয়স ৭৫ বছরের বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ৫টি প্রধান ক্যান্সার হলো স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার। পুরুষদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হলো শ্বাসনালি, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালির ক্যান্সার। নারীদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হল স্তন, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড এবং ওভারি। পুরুষ ক্যান্সার রোগীদের ৭৫.৮ শতাংশ ধুমপায়ী এবং ধোঁয়াহীন পান, জর্দা, তামাক সেবনকারী ৪০.৫ শতাংশ। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৬০.৬ শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন পান, জর্দা, তামাক সেবনকারী। ৪৬ শতাংশ রোগীর ক্যান্সারের সাথে ই-তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে গবেষণায় আরও জানা গেছে, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কম্বাইন্ড চিকিৎসা নিয়েছে এবং ৭.৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসাই নেয়নি। দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী। মৃত রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস, শ্বাসনালি ও পাকস্থলীর ক্যান্সার। প্রতি বছর নতুন করে প্রতি লাখে ৫৩ জন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার ও শ্বাসনালীর ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বেশি।