রুপালি পর্দায় এবার পুরোপুরি দেশি ‘অ্যাংরি ইয়াংম্যান’ রূপে আসছেন তেলেগু তারকা নানি। আজ মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত দসারা। তবে এ ছবিকে প্যান-ইন্ডিয়া বলতে নানির ঘোর আপত্তি। মুম্বাইয়ের এক অভিজাত ক্লাবে নানির মুখোমুখি হয়েছিলেন মুম্বাই প্রতিনিধি।
প্যান-ইন্ডিয়া ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘“দসারা”কে আমরা প্যান-ইন্ডিয়া ছবি বলতে পারি না। মিডিয়া এ ছবির সঙ্গে প্যান-ইন্ডিয়া ট্যাগ জুড়ে দিয়েছে। আমরা বলতে পারি, অনেকগুলো ভাষায় (পাঁচটি) ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। ভারতে আরও অনেক ভাষা আছে। কোনো ছবি যখন সব ভারতীয় ভাষায় মুক্তি পাবে, তখন আমরা তাকে প্যান-ইন্ডিয়া বলতে পারি। আমার কাছে প্যান-ইন্ডিয়ার সংজ্ঞা আলাদা। অভিনেতা বা প্রযোজক কখনোই কোনো ছবিকে প্যান-ইন্ডিয়া বলতে পারেন না। একটা ছবি মুক্তি পাওয়ার পর যখন সারা দেশের মানুষ ছবিটি পছন্দ করেন, তখন সেটা প্যান-ইন্ডিয়া হয়।’
‘দসারা’র ট্রেলারে নানিকে লুঙ্গি পরা দেখা গেছে। এ ছবির গল্প কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে। তাই নানির এ ছবির সঙ্গে পুষ্পা ও কেজিএফ ছবির তুলনা টানা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এই তেলেগু তারকা বলেন, ‘লুঙ্গি পরা মানেই পুষ্পা নয়, আর কয়লা মানেই যে কেজিএফ হতে হবে, এমন কোনো মানে নেই। আমার এ ছবির কাহিনি আলাদা। চরিত্রের প্রয়োজনে আমাকে লুঙ্গি পরতে হয়েছে।’
শ্রীকান্ত ওডেলা পরিচালিত এ ছবির জন্য নানির ওপর শারীরিক আর মানসিক ধকল দুই-ই গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকের কাছে শুটিং মানে পিকনিকের মতো। কিন্তু আমার মোটেও এ অভিজ্ঞতা হয়নি। এ ছবির শুটিংয়ের সময় মনে হয়েছে, আমি শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছি (সশব্দ হেসে)। তবে শেষ পর্যন্ত আউটপুট ভালো হয়েছে। শুধু একটা ভালো ছবি নির্মাণের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ নিংড়ে দিয়েছি। শুধু দাড়ি আর চুল বাড়ানোর জন্য চার মাসের বিরতি নিয়েছিলাম।’
হিন্দি ছবির বাজারে দক্ষিণি ছবির দাপট ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর এখন লার্জার দ্যান লাইফ ছবির যুগ বলে অনেকে মনে করছেন। তবে নানি মানতে রাজি নন, যেকোনো ছবি লার্জার দ্যান লাইফ হলেই সফলতা পাবে। তিনি বলেন, ‘“কেজিএফ”, “আরআরআর”-এর মতো আরও কিছু ছবি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেসব ছবি সফলতা পায়নি। তাই একটা ছবি সফলতার মানদণ্ড কখনোই লার্জার দ্যান লাইফ হতে পারে না। ছবির গল্পে এমন কিছু উপাদান যোগ করতে হবে, যা দর্শককে আকর্ষণ করবে।’
যে পাঁচ কারণে সাড়া ফেলল এই হিন্দি সিনেমা
নানি দক্ষিণি ছবির সফলতার কারণ ফাঁস করে বলেন, ‘দক্ষিণি ছবিতে মাটির গন্ধ পাওয়া যায়। দক্ষিণি ছবির গল্প সারল্যে ভরা। শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত। আর দক্ষিণের নির্মাতারা নতুন নতুন চিন্তাভাবনা পর্দায় তুলে ধরেন। তাই দর্শক এসব ছবির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। আগে হিন্দি ছবি এ রকমই হতো। কিন্তু এখন তারা অন্য ধারার ছবি নির্মাণ করে।’
তেলেগু ছবির দুনিয়ায় সুপারস্টারের ছড়াছড়ি। নানির সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমার কোনো প্রতিযোগিতা নেই। আমরা সবাই ভালো বন্ধু। স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুত্বের পাশাপাশি সবার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা থাকত। এখানেও তা-ই। অনেক সময় অন্য ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব দেখে অবাক হন। সত্যি বলতে, ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে এ রকম বন্ধুত্ব কোথাও দেখতে পাবেন না।’
ছবির দুনিয়ার বাইরে থেকে এসেও ১৫ বছর ধরে রাজত্ব করছেন নানি। বহিরাগত হওয়ার জন্য তাঁকে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে, জানতে চাইলে নানি বলেন, ‘সব ইন্ডাস্ট্রিতেই কিছু অভিনেতা থাকেন, যাঁরা ফিল্মি পরিবারের। শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নয়, সব ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। সত্যি বলতে কখনো কখনো ‘বহিরাগত’ হওয়ার কারণে আমি বেশি খুশি হই। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে এসে সফলতা পেলে, তার অনুভূতি আলাদা হয়। ফিল্মি পরিবার থেকে যাঁরা আসেন, তাঁরা নিশ্চয়ই একটু বেশি সুবিধা পান। কিন্তু তাঁদের পিঠে একটা বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের কাছে সবার অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকে। তাই তাঁদের সংগ্রামটা অন্য রকম। আমার মতো বহিরাগতদের অনেক কঠিন সংগ্রাম করতে হয় ঠিকই। কিন্তু এই সংগ্রামের মজাই আলাদা।’ নিজের ১৫ বছরের ফিল্মি ভ্রমণের প্রসঙ্গে একটু আনমনা হয়ে এই তারকা বলেন, ‘মনে হচ্ছে সবেমাত্র শুরু করেছি। এই ভ্রমণে আমি মানুষের ভালোবাসা, অর্থ, নাম, যশ সবকিছু পেয়েছি।’
এই আড্ডার শেষবেলায় নানি জানান নিজের কিছু গোপন ইচ্ছার কথা। কোন ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে চান? জবাবে তিনি বলেন, ‘ভৌতিক ছবি ছাড়া সব ধরনের ছবি বা চরিত্রে অভিনয় করতে ইচ্ছুক। আসলে ভৌতিক ছবি আমি খুব উপভোগ করি। তাই আমার মনে হয় যে ভূতের ছবিতে অভিনয় করলে ভয়টা কেটে যাবে। তবে আগামী দিনে পৌরাণিক ছবিতে আমি নিশ্চয়ই কাজ করতে চাইব।’
বলিউডে পছন্দের পরিচালকের প্রসঙ্গ তুলতেই মুহূর্তের মধ্যে রাজকুমার হিরানির নাম নেন নানি। তিনি বলেন, ‘রাজকুমার হিরানির ছবি করতে চাই। তাঁর সব ছবি দশবার করে দেখেছি। মানুষের আবেগকে তিনি খুব সুন্দরভাবে পর্দায় তুলে ধরেন। তাঁর গল্প মানুষকে বেঁধে রাখে। তাঁর ছবিতে ভরপুর বিনোদনের পাশাপাশি খুব সুন্দর বার্তা থাকে।’