চট্টগ্রাম নগরের কোথাও আজ শুক্রবার সকাল থেকে সরবরাহ লাইনে গ্যাস পাননি গ্রাহকেরা। গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ আগে থেকে কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রচার না করায় এ নিয়ে গ্রাহকদের কোনো রকম প্রস্তুতিও ছিল না। সকালে গ্যাস বন্ধ থাকায় অনেকেই রেস্তোরাঁয় খাবারের জন্য লাইন দিয়েছেন। কিন্তু বহু রেস্তোরাঁয় রান্নাও হয়নি। অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক চুলা ও লাকড়ি জ্বালিয়ে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
এদিকে হঠাৎ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরের ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গ্যাস মিলছে না। এ কারণে সড়কে কমে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চলাচল। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ নিয়ে ভোগান্তি ছিল তুলনামূলক কম।
আজ সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হয়। আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি গত ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। এটি গতকাল বৃহস্পতিবার চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চালু করা যায়নি। এ ছাড়া পেছনের গতি বা ব্যাক প্রেশার না থাকার কারণে সামিট এলএনজি টার্মিনালটিও গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
আমিনুর রহমান আরও বলেন, আজ সারা দিন গ্যাস না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, সামিটের টার্মিনালটি খালি করা হচ্ছিল। এটিও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যাওয়ার কথা আছে। সব মিলিয়ে কখন পরিস্থিতি ভালো হবে বলা যাচ্ছে না।
গ্রাহকদের দুর্ভোগ
গ্যাস না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকেরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদনান মান্নান থাকেন নগরের কাতালগঞ্জ এলাকায়। তিনি জানান, গ্যাস না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। চুলা জ্বলছে না।
নগরের মোমেনবাগ এলাকার বাসিন্দা রিদুয়ানুল হক বলেন, ‘বাসায় গ্যাস না থাকায় সকালের নাশতা করতে দোকানে গিয়েছিলাম। কিন্তু দোকানেও কোনো নাশতা তৈরি হয়নি। না খেয়ে আছি।’
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা সালমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিন মাস ধরে গ্যাসের তীব্র সংকটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই।
নগরের হামজারবাগ, মোমেনবাগ, হিলভিউ, আসকার দিঘীরপাড়, এনায়েতবাজার, লাভলেন, আন্দরকিল্লার ১০ গ্রাহক বলেন, হোটেলে গিয়েও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তাঁদের কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে মাটির চুলা ব্যবহার করছেন। কেউ সিলিন্ডার কিনেছেন।
এদিকে গ্যাস না পাওয়ায় সড়কে গ্যাসচালিত যানবাহনের সংখ্যাও কমে গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা নেই বললেই চলে। হাতে গোনা দু–চারটি চলাচল করছে। মুরাদপুরে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মুরাদ পারভেজ বলেন, গতকাল কোনোরকমে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিয়েছিলেন তিনি। আজ দুপুর পর্যন্ত চলবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে কেজিডিসিএলের গ্রাহক সংযোগ ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে। এসব খাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৮০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ১ নভেম্বর থেকে কমবেশি ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছিল। এ কারণে সব ধরনের গ্রাহকই বিপাকে পড়েন।
কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কিন টার্মিনালটি চালু হলেও সংকট যাবে না। কারণ, সামিটের টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণে যাবে। দুটি সমানতালে চালু থাকলেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ আছে। দুটি টার্মিনাল মিলে দিনে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়।