রাজধানীর উত্তরখান এলাকার বাসিন্দা হাজেরা বেগম (৮০)। বছর পাঁচেক আগে তাঁর স্বামী আবদুর রশীদ খান মারা যান। একমাত্র সন্তান নাজমুন নাহার সন্তানসহ মোহাম্মদপুরে থাকেন। হাজেরা বেগম একাই থাকতেন নিজের বাসায়। ঈদুল আজহার তিন দিন পরও মায়ের সঙ্গে কথা হয় নাজমুন নাহারের। কিন্তু চতুর্থ দিন (৩ জুলাই) মায়ের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি। পরদিন ভোরেও মাকে ফোনে না পেয়ে ভয় পেয়ে যান তিনি। পরে পরিচিত একজনকে ফোন করে মায়ের বাসায় পাঠান। সেখানে গিয়ে বাসার দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে স্বজনেরা দরজা ভেঙে দেখেন, ঘরের মেঝেতে হাজেরা বেগমের লাশ পড়ে আছে।
পরে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ এসে হাজেরা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ৫ জুলাই উত্তরখান থানায় হত্যা মামলা করেন নাজমুন নাহার।
পুলিশ জানায়, হাজেরা বেগমের টিনশেড বাড়িতে চারটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া ছিল। দুটি কক্ষের ভাড়াটেরা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। বাকি দুটি কক্ষের একটির ভাড়াটে এক নারী। অপর কক্ষটিতে থাকতেন আরব আলী নামের এক ব্যক্তি। পেশায় গামছা ব্যবসায়ী। তাঁর পাশের কক্ষে থাকতেন হাজেরা। ঘটনার পর থেকেই আরব আলী পলাতক ছিলেন।
মামলার পর হত্যার ঘটনা তদন্তে নামে পুলিশ। এ জন্য হাজেরা বেগমের বাসার সামনের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তারা। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরব আলীর গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়। প্রযুক্তির সহায়তায় ৫ জুলাই কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। এ সময় হাজেরা বেগমকে খুন করার কথা স্বীকার করেন আরব আলী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরখান থানার উপপরিদর্শক মুশফিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আরব আলী গত সাত থেকে আট মাস ধরে হাজেরার বাসায় ভাড়া থাকছেন। মাস তিনেক ধরে তিনি ভাড়া দিতে পারছিলেন না। ভাড়া চাওয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে হাজেরা বেগমকে খুন করেন আরব আলী।
এ মামলায় উত্তরখান থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে ঢাকার সিএমএম আদালতকে জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ৩ জুলাই বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের সময় আরব আলী তাঁর কক্ষের সামনের বারান্দায় বিদ্যুতের একটি বাল্ব সংযোগের কাজ করছিলেন। তখন হাজেরা বেগম আরব আলীর কাছে ভাড়ার টাকা চান। একপর্যায়ে আরব আলী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে যান। তবে বারান্দায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তার হাজেরার মুখে জড়িয়ে গেলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তখন আরব আলী বাসার বিদ্যুতের প্রধান সুইচ বন্ধ করে দেন। পরে দেখতে পান, হাজেরা বেগম মারা গেছেন। তখন হাজেরার মরদেহ বারান্দা থেকে টেনে নিয়ে কক্ষে রেখে আসেন আরব আলী। পরে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন।
হাজেরার মেয়ে নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমার মাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে পালান আরব আলী। এখন তিনি খুনের দায় থেকে বাঁচার জন্য মা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার নাটক সাজিয়েছেন।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর হাজেরা বেগমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে। ঘটনাস্থলের প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলার সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে যত দ্রুত সম্ভব আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।