কানাডার পর যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভারত

0
96
গুরপতবন্ত সিং পান্নুন। ছবি-সংগৃহীত

কয়েক মাসের ব্যবধানে ফের চাপের মুখে ভারত। কানাডার পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরেক শিখ নেতাকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনা করা ধরা পড়েছে। অবশ্য, সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দারা। এরপর বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছে হোয়াইট হাউস। বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের।

হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্যবস্তু করা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দ্বৈত নাগরিক। তিনি খালিস্তান নামে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংগঠনের প্রধান।

স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ভারত সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে হোয়াইট হাউস। উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি অভিযোগ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

এর আগে গত ১৮ জুন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে মন্দিরের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় হরদীপ সিং নিজ্জার নামের আরেক শিখ নেতাকে। ওই ঘটনার পর গত সেপ্টেম্বরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদে বলেন, ভারত সরকার এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। অবশ্য ভারত তা অস্বীকার করে আসছে। এ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে, যা গড়ায় কূটনীতিক বহিষ্কার পর্যন্ত।

গত বুধবার একাধিক মার্কিন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়, বাইডেন প্রশাসন ভারত সরকারকে বলেছে, পান্নুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্ভবত নয়াদিল্লির সম্পৃক্ততা আছে– এমন তথ্য রয়েছে। তবে এসব প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবে।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এ হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু তথ্য সংযুক্ত করেছে। এতে সংঘবদ্ধ অপরাধী, অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী এবং অন্যদের মধ্যে যোগসাজশ থাকার তথ্য দেয়। বাইডেন প্রশাসনের গত বুধবারের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব বিষয় উভয় দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, ‘আমরা এই সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে কাজ করছে। ভারত সরকারও এ নিয়ে বিস্ময় এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, এ ধরনের কার্যকলাপ তাদের নীতির মধ্যে পড়ে না।’

নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের পর ট্রুডো যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং বিরোধে জড়িয়েছেন কূটনৈতিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য সে রকম কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। সতর্ক ও তদন্তের চাপ দিলেও পান্নুন হত্যা পরিকল্পনায় এখনও সরাসরি ভারত সরকারকে অভিযুক্ত করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্ব প্রকাশ পায়। কারণ, এরই মধ্যে দুই দেশ প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় তৎপর। এর পরও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কোনো চক্রান্তে ভারত জড়িত থাকলে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক মিত্রের বিরুদ্ধে তা হবে বড় লঙ্ঘন। এটি অংশীদার হিসেবে নয়াদিল্লির নির্ভরযোগ্যতার প্রশ্নগুলো আরও তীব্রতর করবে।

ভারতে পান্নুনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। সম্প্রতি তিনি ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীদের হুমকি দেন। এ ঘটনায়ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.