ডিবি কার্যালয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের খাওয়া এবং হাসপাতালে আমানউল্লাহ আমানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলের দেখতে যাওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক থাকে না তারাই এগুলো করে। এই নাটকে তারাই ছোট হয়েছে। গয়েশ্বর-আমান ছোট হয়নি।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ জনসমাবেশের আয়োজন করে।
এ সময় জনগণের দাবি মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। অন্যথায় পালানোর পথ খুঁজে পাবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
শনিবার ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা নির্যাতন ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৮-৩০ তারিখে আওয়ামী লীগ ক্রিকেটের মতে গুগলি খেলেছে। পুলিশ আমাদের ২৭ জুলাই সমাবেশ করতে দেয়নি। আমরা পরদিন করলাম। সেখানে প্রতিকূল পরিবেশেও টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। তাদের বার্তা ছিল এই মুহূর্তে গদি ছাড়ো।
তিনি বলেন, আমাদের ছোট ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও সরকার ভয় পেয়েছে। তারা যুদ্ধের সাজে সাঁজোয়া যান নিয়ে বিএনপির নিরীহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা করেছে। প্রবীণ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে গিয়ে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এগুলো করেও কি মানুষের ঢল থামানো গেছে? থামানো যায়নি, যাবে না। এনাফ ইজ এনাফ।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কয়েকটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনেছে। একজন নাকি আমেরিকার। উনি কে? তাকে আমেরিকার কেউ চেনে না। গতবারও তাকে আনা হয়েছিল। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে আবারও নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। তবে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন চায় না। আমরাও নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। এবার আর সেটা হবে না। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে আগের মতো নির্বাচন করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা সব দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি এক দফা। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অবিলম্বে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করুন। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার বিরুদ্ধে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি বন্ধ করুন। না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।
জনসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকতুল্লাহ বুলু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, ওলামা দলের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম প্রমুখ।