যুবরাজ সিং বলেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘নতুন যুবরাজ’। একধাপ এগিয়ে হার্দিক পান্ডিয়া বললেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরবর্তী ‘মহাতারকা’। আর আকাশ চোপড়া তো ভবিষ্যৎ পর্যন্ত অপেক্ষাই করতে রাজি নন। বলে দিলেন, ‘সে তারকা হিসেবে তৈরি হচ্ছে না, এরই মধ্যে মহাতারকা হয়ে গেছে।’
এমন প্রশংসার ঢলই নেমেছে শুবমান গিলের জন্য। ২৩ বছর বয়সী এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান এখন ফর্মের চূড়ায় আছেন। কাল রাতে আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে গুজরাট টাইটানসের হয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে খেলেছেন ৬০ বলে ১২৯ রানের ইনিংস। যা সর্বশেষ চার ইনিংসে তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরি।
শট বাছাই, খেলার ধরন আর দাপুটে শরীরী ভাষা মিলিয়ে গিলের ব্যাটে মাতোয়ারা দল নির্বিশেষে সব আইপিএল দর্শকরা। গতরাতে গিলের ১০ ছয় ৭ চারে গড়া ১২৯ রানের ইনিংসটি আইপিএল প্লে–অফ ইতিহাসে সর্বোচ্চ, আর টুর্নামেন্টের যে কোনো পর্যায় মিলিয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
গিলের দুর্দান্ত ইনিংসের ম্যাচে মুম্বাইকে ৬২ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে গুজরাট। ম্যাচের শেষ তো বটেই, গিল ব্যাটিংয়ে থাকতেই টুইটারে, ধারাভাষ্য কক্ষে আর টিভি অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকেরা। এর মধ্যে গিল–বন্দনায় আলাদাভাবে নজর কেড়েছে শচীন টেন্ডুলকারের প্রতিক্রিয়া।
ক্যারিয়ারের শুরুর পর্যায়ে গিল যেভাবে ছুটছেন, অনেকের মতে সুনীল গাভাস্কারের পর টেন্ডুলকার আর টেন্ডুলকারের পর কোহলি হয়ে সামনে কোহলির পর গিলই হবেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রধান মুখ। যে উত্তরাধিকারের ব্যাটন গিলের হাতে উঠতে যাচ্ছে, সেখানে পূর্বসূরী টেন্ডুলকারের প্রতিক্রিয়ার বিশেষ মূল্য আছে।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গিলের সেঞ্চুরি মাঠে বসেই দেখেছেন টেন্ডুলকার। কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার মুম্বাইয়ের মেন্টর। তাঁর দলের বোলারদের ওপর গিলের ব্যাটিং–তাণ্ডব দেখে কখনো কখনো চোখে–মুখে বিস্ময় দেখা গেছে তাঁর। সম্প্রচার ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে এ সব দৃশ্য।
তবে টেন্ডুলকার–গিল সম্পর্কের রসায়ন অবশ্য এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ম্যাচশেষে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা গেছে, মাঠের সাইডলাইনে গিলকে পাশে বসিয়ে কথা বলছেন টেন্ডুলকার। টেন্ডুলকার ডেকেছেন না গিল নিজেই কথা বলতে গেছেন সেটি অবশ্য স্পষ্ট নয়।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের জল্পনায় উঠে আসছে অনেক কথা। যার মধ্যে সবচেয়ে ‘কমন’– হবু জামাই–শ্বশুর আলোচনা। টেন্ডুলকারের মেয়ে সারার সঙ্গে গিলের প্রেমঘটিত সম্পর্কের গুঞ্জন প্রচলিত আছে ভারতে।
মাঠে এ দিন মুম্বাইয়ে ম্যাচ দেখতে সারাও হাজির ছিলেন। সারার উপস্থিতিতে গিলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর গিলের শটে টেন্ডুলকারের মুগ্ধতা আর ম্যাচ শেষে গিলকে পাশে বসিয়ে টেন্ডুলকারের কথা বলা — টুকরো টুকরো এ সব ঘটনা মিলিয়ে দুয়ে দুয়ে চার মেলানোর চেষ্টা করছেন অনেকে।
বিশেষ করে টেন্ডুলকার হাত সামনে নিয়ে গিলকে কিছু একটা বলছেন– এমন ছবিকে ‘মিম’ বানিয়ে নানা ক্যাপশন জুড়ে দিচ্ছেন তারা। কয়েকটি ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের মন্তব্যের মধ্যে আছে, ‘আত্মীয়তা পাক্কা, কথা দিলাম’, ‘বিশ্বকাপ জিতিয়ে দিও, আত্মীয়তা পাক্কা’, ‘কী পারিবারিক আবহ’, ‘আরআরআর (সিনেমা)–এর পর এসএসএস (শচীন, সারা, শুবমান), ‘এরপর ওর দিকে তাকালে হাত ভেঙে দেব’।
আসলে কী কথা হয়েছে টেন্ডুলকার আর গিলই ভালো জানেন। তবে দুজনের ছবিটি যে আগামীর ভারতীয় ক্রিকেটে বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে, সে আভাষ কিন্তু পাওয়াই যাচ্ছে।