সমকালের প্রয়াত সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে সমকাল পরিবার। রোববার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সমকাল পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা সেখানে পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মরহুম সম্পাদকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, উপ-সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, মাহবুব আজীজ, সহযোগী সম্পাদক লোটন একরাম, শেখ রোকন, বিশেষ প্রতিনিধি সাহাদাত হোসেন পরশ, মফস্বল সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, বিজ্ঞাপন বিভাগের ডিজিএম মো. শাহেদুল আকন, প্রধান আলোকচিত্র সাংবাদিক মাহাবুব হোসেন নবীন, জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মীর সামী প্রমুখ।
এ ছাড়া পরিবার এবং গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বানারীপাড়া বায়তুল আমান এতিমখানা ও বানারীপাড়া উত্তরপাড়া বেগম ফজিলাতুন্নেছা এতিমখানায় রোববার দুপুরে বাদ জোহর কোরআন খানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
গোলাম সারওয়ার ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তখন থেকে টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এ পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মাধ্যমে নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। মরহুম গোলাম কুদ্দুস মোল্লা ও মরহুম সিতারা বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আজীবন সোচ্চার ছিলেন।
দেশের সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাবিতে ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় তাঁর অভিষেক। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহসম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এর পর মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি নিজ এলাকা বরিশালের বানারীপাড়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহসম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম সারওয়ার দৈনিক যুগান্তরেরও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
দেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন গোলাম সারওয়ার। মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতায় উৎকর্ষের কারণে গোলাম সারওয়ারকে অনেকেই ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ছিলেন এ দেশের সংবাদপত্রে সাফল্য ও পেশাদারিত্বের প্রতীক।
সৃজনশীল সাহিত্যেও ছিল তাঁর সাবলীল বিচরণ। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে– রঙিন বেলুন, সম্পাদকের জবানবন্দি, অমিয় গরল, আমার যত কথা এবং স্বপ্ন বেঁচে থাক উল্লেখযোগ্য।
সাংবাদিকতায় অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা ও ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন তিনি।