গোপনে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ায় পাকিস্তানকে আইএমএফের ঋণ পেতে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র

0
147
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন চুক্তির আওতায় ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেয় পাকিস্তান, ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পেতে ইউক্রেনকে অস্ত্র–গোলাবারুদ দিয়েছে পাকিস্তান। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপনে একটি চুক্তিও করে ইসলামাবাদ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দ্য ইন্টারসেপ্টের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে আসে।

ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে হওয়া এই গোপন অস্ত্র চুক্তি সম্পর্কে জানেন এমন দুটি সূত্র ইন্টারসেপ্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একই সঙ্গে এই অস্ত্র চুক্তি নিয়ে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একাধিক গোপন নথি থেকেও বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছে ইন্টারসেপ্ট।

ইন্টারসেপ্ট বলছে, তিন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র তৈরির কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি আছে পাকিস্তানের। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকটে ভুগছে ইউক্রেন। ঠিক এমন সময়ে জানা যাচ্ছে দেশটি পাকিস্তানের কামানের গোলা ও অন্য সামরিক সরঞ্জাম পেয়েছে। তবে পাকিস্তান বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে কেউই ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে করা এ চুক্তির কথা স্বীকার করছে না।

গোপন নথির বরাতে ইন্টারসেপ্ট বলছে, গত বছর গ্রীষ্ম থেকে এ বছরের বসন্ত পর্যন্ত সময়ে অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। এ ছাড়া এসব নথিতে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়ার বিনিময়ে পাকিস্তান কত অর্থ পাবে, লাইসেন্স, দুই দেশের কর্মকর্তাদের আলোচনাসহ বিস্তারিত সব রয়েছে।

ইন্টারসেপ্ট বলছে, মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখেছে তারা। ওই জেনারেল আগে সরকারি যেসব নথিতে স্বাক্ষর করেছেন তার সঙ্গে গোপন এই নথিতে করা স্বাক্ষরে হুবহু মিল পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের এই অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল মিলিটারি প্রোডাক্টস। এটি মূলত গ্লোবাল অর্ডন্যান্সের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। অস্ত্র বিক্রি ও লেনদেন করার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার কাজ করে থাকে গ্লোব্লার অর্ডন্যান্স। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।

ইন্টারসেপ্ট বলছে, অস্ত্র বিক্রির কারণে সৃষ্ট ‘রাজনৈতিক সুনাম’ এবং এ থেকে পাওয়া অর্থ পাকিস্তানকে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছে। এছাড়া একাধিক সূত্র ও এ সংক্রান্ত নথির বরাতে ইন্টারসেপ্ট বলছে, গোপনে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিলে আইএমএফ থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানকে নিশ্চয়তাও দিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা।

দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পরে এ বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানকে ঋণ দিতে রাজি হয় আইএমএফ। ইন্টারসেপ্ট দাবি করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন অস্ত্র চুক্তি করার পরপরই পাকিস্তানের জন্য আইএমএফের ঋণের দরজা খুলে যায়। ওই অস্ত্র চুক্তি পাকিস্তানকে এ ঋণ পেতে সাহায্য করেছে।

ঋণ পেতে পাকিস্তানকে কঠিন কিছু শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। সেই শর্ত পূরণের জন্য পাকিস্তান সরকার কিছু কঠোর আর্থিক ও কাঠামোগত নীতি সংস্কার করার পদক্ষেপ নেয়। সরকারের এসব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশে শুরু হয় বিক্ষোভ। এ বিক্ষোভের ফলে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা।

ইন্টারসেপ্ট বলছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করার নেপথ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহেই দেশটির সামরিক বাহিনী গত বছরের এপ্রিলে ইমরান খানের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। ওই ভোটেই ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইসলামাবাদের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে অখুশি ছিল ওয়াশিংটন। এ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ওপর তাদের ক্ষোভ জানান। মার্কিন কূটনীতিকেরা এমন হুমকিও দেন যে, ইমরান খান যদি ক্ষমতায় থাকেন তাহলে এর ফল হবে মারাত্মক। তবে ইমরানকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করলে ‘সব ভুল ক্ষমা করে দেওয়া হবে’।

ইমরান খান ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর পাকিস্তান হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রয়োজনের বন্ধু’। ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যারা মিত্র তারাও ইসলামাবাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। এসব মিলিয়েই আইএমএফ থেকে পাকিস্তানের ঋণ পাওয়ার দুয়ার খুলে যায়। আনুগত্যের পুরস্কার পায় পাকিস্তান।

ইন্টারসেপ্ট বলছে, জরুরি পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের জন্য আইএমএফের এই ঋণ ছিল ‘জীবনদায়ী’। কেননা একদিকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা অন্যদিকে অর্থনৈতিক দুরাবস্থাসহ নানামুখী চাপে থাকা সরকার সংকট মোকাবিলায় একে কাজে লাগিয়েছে।

তবে বাইরের কোনো চাপে পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে আইএমএফ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমএফের এক মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে চাপ তৈরির যেসব কথা বলা হচ্ছে তা পুরোপুরি মিথ্যা।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন চুক্তির আওতায় ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়ার বিনিময়ে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছু বলছে না পাকিস্তানও। ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসের এক মুখপাত্রের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ওয়াশিংটনও বিষয়টি অস্বীকার করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, ঋণ নিয়ে আলোচনা পাকিস্তান ও আইএমএফের কর্মকর্তাদের ব্যাপার। এসব আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ছিল না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.