মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘গোগালিছড়া’ দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করা হতো। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে ভরাট ও দখলের কারণে ছড়াটির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে যায়। একপর্যায়ে এটি ‘মরা গোগালিছড়া’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ছড়াটি পুনঃখননের কাজ শুরু করে। এলাকাবাসীর আশা, এ কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতায় তাঁদের আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। পুনঃখননের পাশাপাশি পৌর কর্তৃপক্ষ ছড়াটি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
পাউবো ও কুলাউড়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের গাজীপুর এলাকার পাহাড় থেকে গোগালিছড়ার উৎপত্তি। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা হয়ে এটি কাদিপুর ইউনিয়নে ফানাই নদে গিয়ে মিশেছে। ফানাই নদ হাকালুকি হাওরের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি পাউবো ‘৬৪ জেলায় অভ্যন্তরীণ নদী, খাল ও বিল পুনঃখনন কর্মসূচির (প্রথম পর্যায়)’ আওতায় গোগালিছড়ার সাড়ে তিন কিলোমিটার জায়গা পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। এ অংশটুকু পৌর এলাকার মধ্যে পড়েছে। মেসার্স এম রহমান নামের ময়মনসিংহের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। এতে ব্যয় ধরা হয়, প্রায় ৬৪ লাখ টাকা। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু হয়। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা।
গত ২৯ মার্চ সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার সোনাপুর, উছলাপাড়া ও দক্ষিণ মাগুরা এলাকায় এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে ছড়ার পুনঃখননকাজ চলছে। সেখানে ছড়ার দুই পাশ ঘেঁষে অনেকে কালভার্ট ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় এসব স্থাপনা ভেঙে দিয়েছেন। আবার কোনোটি ভাঙার কাজ বাকি।
সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী খন্দকার লিটন আহমদ বলেন, দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার ফসলি জমিতে চাষাবাদ সম্ভব হয় না। মরা গোগালিছড়ার পুনঃখননকাজে পুরো পৌরবাসী উপকৃত হবেন। জলাবদ্ধতার কষ্টে আর ভুগতে হবে না।
পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ বলেন, জলাবদ্ধতা পৌরসভার বড় একটি সমস্যা। তিনি এ সমস্যা দূর করতে পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মরা গোগালিছড়া পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া অনেক স্থানে লোকজন ছড়ার দুই পাশে নানা স্থাপনা গড়ে তোলেন। এতে ছড়াটি সংকীর্ণ হয়ে পড়ে।
মেয়র আরও বলেন, পুনঃখননের কাজ শুরুর আগে ছড়ার সীমানা চিহ্নিত করা হয়। এরপর এলাকাবাসীকে নিয়ে তাঁরা বৈঠক করেন, জনস্বার্থে অবৈধ স্থাপনা অপসারণে তাঁদের অনুরোধ করেন। এতে অনেকে স্বেচ্ছায় স্থাপনা অপসারণে সম্মত হন। পুনঃখননকাজ শেষ হওয়ার পর কয়েকটি স্থানে ছড়ার দুই পাড় দিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হবে। শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছও লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
ছড়ার পুনঃখননকাজ কাজটি তদারকের দায়িত্বে থাকা পাউবোর কুলাউড়া অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী আল আমিন সরকার গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই পুরো কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।