বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরায় আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র হাতে অনেককে রাস্তায় দেখা যায়। তারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান ও গুলি ছোড়েন। এতে অনেকে হতাহত হন। সেই সময়ের কিছু ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে হামলাকারীদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজ, তার ছেলে লিয়ন খান ও ভাই মো. মিঠু। বাকিরাও তাদের সহযোগী বলে জানা গেছে। তবে তাদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করেন এলাকাবাসী। এর মধ্যে গত ২ আগস্ট উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের কিছু ছবিতে যুবরাজ, তার সহযোগী ও পরিবারের সদস্যদের দেখা যায়। তাদের ভালোভাবে চেনেন এমন কিছু মানুষ ছবি-ভিডিও দেখে শনাক্ত করতে সমকালকে সহায়তা করেছেন।
উত্তরার বাসিন্দা গাড়ি ব্যবসায়ী রাজু চৌধুরী বলেন, সেদিন (২ আগস্ট) ছিল গণমিছিল কর্মসূচি। জুমার নামাজের পর আন্দোলনকারীরা মাইলস্টোন কলেজের সামনে জড়ো হন। এক পর্যায়ে তারা মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বাধা দেয়। হামলা চালানো হয় আন্দোলনকারীদের ওপর। গুলিবিদ্ধ দু’জনকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে দেখি।
স্থানীয়রা জানান, সেদিন হেলমেট পরে হাতে ক্ষুদ্রাস্ত্র নিয়ে মাঠে নামেন সাবেক কাউন্সিলর যুবরাজ ও তার সহযোগীরা। দূর থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, যুবরাজের গায়ে ছিল ছাইরঙা শার্ট। আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, এক সহযোগীর হাত থেকে শটগান নিচ্ছেন তিনি। এর পর সেটি লোড করে বেপরোয়া গতিতে গুলি ছোড়েন। তার পাশে হেলমেট ও মাস্ক পরা আরও কয়েকজন ছিলেন। তার ভাই মিঠুর হাতে ছিল একটি শটগান। তিনি ছিলেন কালো গেঞ্জি পরা। মুখ ঢাকা না থাকায় তাঁকে বেশ ভালোভাবেই চেনা যায়। যুবরাজের ছেলে লিয়ন খানকে দেখা যায়, সাদা গেঞ্জি ও হেলমেট পরা। তার হাতেও ছিল শটগান। পাশেই দেখা যায় যুবরাজের আরেক ভাইকে, তবে তার নাম জানা যায়নি। তাদের সঙ্গে ও আশপাশে ছিলেন যুবরাজের সহযোগী আলাল, সিলন, হাসান, লাসেন, হিমেল, শাহ আলম ও নান্নু। সাবেক এমপি হাবিব হাসানের নেতৃত্বে সেদিন আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালান যুবরাজ ও তার সঙ্গীরা। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘ সময় রাস্তায় পড়ে থাকেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিও ছিল না। আবার আহতদের হাসপাতালে নিলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ধাওয়া দিয়ে বের করে দিয়েছেন। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে মারা গেছেন। মৃত সবার পরিচয় জানা যায়নি।
উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সাগর আহমেদ দুর্জয় বলেন, ২ আগস্ট দুর্বৃত্তদের গুলিতে অন্তত দু’জন মারা যান। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর বাইরে আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারা বেঁচে আছেন কিনা, জানার সুযোগ হয়নি।
উত্তরা-পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়া ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। শিগগির তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
এদিকে কাউন্সিলর যুবরাজ ও তার সহযোগীদের অস্ত্র হাতে ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানোর ব্যবস্থা করেছেন এলাকাবাসী। তারা হত্যা ও হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ইন্দ্রজিৎ সরকার