গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সুতা তৈরি কারখানার নিখোঁজ এক শ্রমিকের সন্ধান দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন ওই শ্রমিকের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা। আজ বুধবার সকালে উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকার এম এস এ স্পিনিং লিমিটেড নামের একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় শ্রমিকদের বাধা দিতে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানা কর্তৃপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিখোঁজ শ্রমিকের নাম মো. আমিন খান (৩৫)। তিনি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আশুগঞ্জ এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে আমিন খানের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কারখানার শ্রমিক ও আমিনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমিন খান কয়েক বছর আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আন্দারমানিক এলাকায় মাইনুদ্দিনের মেয়ে সুমনা আক্তারকে বিয়ে করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিশ্চিন্তপুর এলাকার এম এস এ স্পিনিং লিমিটেডে কাজ করতেন। আমিন বিভিন্ন সময় কারখানার শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করতেন। গতকাল সকালে আমিন প্রতিদিনের মতো কর্মস্থলে যান। কাজ শেষে তিনি কারখানা থেকে বের হলেও আর বাড়িতে ফেরেননি। আজ সকালে আমিনের স্ত্রী সুমনা ওই কারখানায় এসে স্বামীর খোঁজ করলে কারখানার কোনো কর্মকর্তা তাঁর সন্ধান দিতে পারেননি।
পরে বিষয়টি কারখানার অন্য শ্রমিকেরা জানতে পারলে তাঁরা সবাই কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় শ্রমিকদের বাধা দিতে গেলে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে।
কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নির্মলেন্দু সাহা মুঠোফোনে বলেন, শ্রমিকদের হামলায় তিনিসহ সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল হক ও ইকুইপমেন্ট কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস আহত হয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শ্রমিক নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্মলেন্দু সাহা বলেন, ‘নিখোঁজ শ্রমিকের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। সে গতকাল যথাসময়ে কাজে এসেছিল এবং যথাসময়ে কারখানা থেকে বের হয়ে গেছে। এরপরের কোনো খোঁজ আমাদের কাছে নেই।’
তবে হামলার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত পাঁচজন শ্রমিক বলেন, আজ সকালে তাঁরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে কারখানার কর্মকর্তারা তাঁদের বকাঝকা করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য হাতাহাতি হয়। তবে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো হামলা করা হয়নি বলে তাঁরা দাবি করেন।
এদিকে শ্রমিকদের আন্দোলনের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা ও মৌচাক ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তবে এরপরও শ্রমিকেরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান। পরে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার শ্রমিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিখোঁজ আমিনের সন্ধান দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শ্রমিকেরা সেখান থেকে সরে যান। এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে নিখোঁজ আমিনের স্ত্রী ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারখানায় এলাকাতেই অবস্থান করছিলেন।
নিখোঁজ আমিনের স্ত্রী সুমনা আক্তার বলেন, ‘কিছুদিন আগে কারখানার স্যাররা লোক ছাঁটাই করেছেন। তখন আমার স্বামী সবাইকে নিয়ে স্যারদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারপর তাদের কাজে ফেরানো হয়েছে। এর পর থেকে তাকে পুলিশ দিয়ে হুমকি দিয়েছে। নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। দুই দিন আগেও পুলিশ এসে আমার স্বামীকে বলছে, এলাকা ছাড়তে। আমি কারখানা থেকে স্বামীরে না নিয়া বাড়ি ফিরা যামু না। আমার স্বামীরে সুস্থ অবস্থায় চাই।’
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলাম বলেন, নিখোঁজ শ্রমিকের মুঠোফোনের সূত্র ধরে গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত তাঁর অবস্থান জানা গেছে। এর পর থেকে আর তাঁর অবস্থান জানা যায়নি। তবে তাঁকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।