গাজীপুরে টানা তৃতীয় দিনেও শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, ভোগান্তি চরমে

0
14
সড়ক অবরোধের কারণে অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন

গাজীপুরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। তিনদিন ধরে চলা অবরোধ নিরসনে পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের ছয়টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে টানা তিনদিন ধরে ব্যস্ততম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।’

সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে মোগরখাল এলাকায় গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোববার পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে তাদের বেতন পরিশোধ করার জন্য সাতদিনের সময় চেয়েছিল। কিন্তু তারা সেটা মানেননি। কারণ, গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় অনেক তারিখ দিয়েও মালিক এবং প্রশাসন তাদের কথা রাখতে পারেনি। তাই তারা কোনো কথাতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।

শ্রমিকরা দ্বিতীয় রাতও মহাসড়কে কাটিয়েছে। তারা পালাক্রমে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের পক্ষে বিক্ষোভ করছেন। সড়কের পূর্ব পাশে একটি অটোরিকশায় মাইক লাগিয়ে শ্রমিকদের মহাসড়কে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে।

এদিকে, শ্রমিক অবরোধের কারণে তৃতীয় দিনের মতো গাজীপুর থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার গণপরিবহনের যাত্রী, শ্রমিক, কর্মচারী, সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষকে গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তায় নেমে পায়ে হেঁটে অথবা বিকল্পপথ দিয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। আর ঢাকা থেকে যেসকল মানুষ উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তারা বিকল্প পথ দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা ও চন্দ্রা হয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস দিয়ে এবং জয়দেবপুর থেকে বনমালা হয়ে টঙ্গী দিয়েও কিছু যানবাহন চলাচল করছে।

ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ইউনাইটেড পরিবহনের এক চালক জানালেন, শনিবার সকাল ৯টা থেকে তিনি কলম্বিয়া গার্মেন্টসের উত্তর পাশে এসে আটকা পড়েছেন। ওইদিন যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে চলে গেলও তিনি এবং তার দুই সহকারী আটকা পড়ে আছেন তিনদিন ধরে। তিনি যেখানে আছেন যানজটের কারণে সেখান থেকে পেছনেও ফিরে যেতে পারছেন না। বলেন, তিন দিন ধরে গোসল খাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়লেও উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে গাড়িতেই অবস্থান করতে হচ্ছে।

একইভাবে উত্তরাঞ্চল থেকে পণ্য বোঝাই কাভার্ড ভ্যানের চালক ইব্রাহিম হোসেন জানালেন, তিনদিন ধরে আটকা পড়ে আছি সড়কে। কোম্পানির পণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু সড়ক অবরোধের কারণে যেতে পারছি না।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, শনিবার আন্দোলনের শুরু থেকেই শ্রমিক ভাইদের অনুরোধ করছি সড়ক ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা বেতন না পাওয়ায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মালিক পক্ষের সাথেও কথা বলার চেষ্টা করেছে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়টি বিজিএমইএ’সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.