ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর আরও ভেতরে ঢুকে পড়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। ট্যাংক নিয়ে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সেখানকার বাড়িঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিগ্বিদিক পালাচ্ছেন নগরীর বাসিন্দারা।
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজা নগরীর উত্তর সীমানায় অবস্থিত এবাদ-আলরহমান এলাকায় প্রবেশ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় তারা বিভিন্ন আবাসিক ভবনে গোলাবর্ষণ করে। এতে অনেকে আহত হন। বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয় অসংখ্য বাসিন্দাকে।
এবাদ-আলরহমান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে গাজা নগরীর জালা স্ট্রিট অবস্থিত। সেখানকার বাসিন্দা সাদ আবেদ (৬০) বলেন, ‘হঠাৎ শুনতে পেলাম এবাদ-আলরহমানে ট্যাংক ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে বিস্ফোরণের শব্দ তীব্র হতে থাকে। দেখি মানুষজন আমাদের এলাকায় পালিয়ে আসছে। যুদ্ধবিরতি না হলে আমাদের বাড়ির সামনেই ট্যাংক দেখতে পাব।’
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজা নগরীতে নতুন করে অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের দাবি হামাসের শেষ ঘাঁটি সেখানে অবস্থিত। অপরদিকে উপত্যকাটির প্রায় ২২ লাখ মানুষের অর্ধেকই এখন সেখানে বসবাস করছেন।
হামলার কারণে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়েছেন। তবে নগরীর খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, তাঁরা সেখানেই অবস্থান করবেন। কারণ, গাজা নগরী ছেড়ে দক্ষিণ দিকে পালানোর চেষ্টা মৃত্যুদণ্ডের শামিল।
এদিকে গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি বলেন, ‘গাজা নগরী খালি করতেই হবে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল ফাঁকা এলাকা রয়েছে। এ ছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির এবং আল-মাওয়াসিতেও ফাঁকা জায়গা রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, গাজা নিয়ে আজ হোয়াইট হাউসের একটি বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। তিনি জানান, এ বছরের মধ্যেই ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলের যুদ্ধের মীমাংসা হবে।
অপরদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে অনাহার ও অপুষ্টির কারণে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। এ নিয়ে যুদ্ধের মধ্যে এখন পর্যন্ত অনাহারে ৩১৩ জনের মৃত্যু হলো; যার মধ্যে ১১৯টিই শিশু। এ সময় ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৮ জন ত্রাণপ্রত্যাশী।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উপত্যকাটিতে ৬২ হাজার ৮১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৯ জন।
ভেনিসে বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইতালির ভেনিসে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান ভবনের বাইরে এ বিক্ষোভ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’ এবং ‘গণহত্যা বন্ধ কর’ প্ল্যাকার্ড ছিল।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজ দেশে যুদ্ধের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার হাজার হাজার ইসরায়েলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করেছেন। তাঁরা যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
রয়টার্স, কায়রো