গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ আটকে গেল যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে

0
27
গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে ৪ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হয়, ছবি: এএফপি

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই প্রস্তাবে গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছিল।

গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উপত্যকায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ আছে।

নিরাপত্তা পরিষদে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত ভোটে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল একমাত্র দেশ, যারা এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্য ১৪ সদস্যদেশ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দেয়।

প্রস্তাবে গাজায় জিম্মি অবস্থায় থাকা ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির আহ্বানও জানানো হয়েছিল। তবে ওয়াশিংটন একে ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির দাবিকে জিম্মিদের মুক্তির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হয়নি।

১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বক্তব্য দেন। তিনি তখন ১০ দেশের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবটি নিয়ে নিজ দেশের বিরোধিতার কথা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার বিষয়টিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

নিরাপত্তা পরিষদে ডরোথি শিয়া আরও বলেন, ‘সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র একটি অত্যন্ত স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে তা হলো, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। এ অধিকারের মধ্যে রয়েছে হামাসকে পরাজিত করা এবং নিশ্চিত করা যে ভবিষ্যতে তারা যেন আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে।’

চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, ইসরায়েলের কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতিটি সীমারেখাকে ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবনাগুলোরও গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়েছে। এরপরও একটি দেশকে রক্ষার জন্য এই লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো থামানো হয়নি বা তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি।

আল–জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, এই ভেটোর কারণে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র অনেক একঘরে হয়ে পড়েছে।

মারওয়ান বিশারার মতে, অনেক দেশ যখন একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে, তখন পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ আবহ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও গাজায় তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্রমাগত যে ঐক্য তৈরি হচ্ছে, তা ঠেকানোর জন্য একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাজায় ইসরায়েল আত্মরক্ষা করছে না, বরং তারা তাদের দখলদারি ও অবরোধকে রক্ষা করছে।’

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা–সংক্রান্ত ১৪টি প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি প্রস্তাব পাস হয়েছে। গতকালের ভোটাভুটি ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরের পর প্রথম ভোটাভুটি।

আল জাজিরা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.