
কুড়িগ্রামের চিতলমারীতে একটি খালের পাশে সরকারি জায়গায় বন্দোবস্ত পেয়ে বাড়ি গড়ে তুলেছেন এক ব্যক্তি। এর ফলে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। শিক্ষকেরা বাধ্য হয়ে সড়কের ধারের গাছতলায় বসেই পাঠদান করছেন। আর কোনো প্রয়োজনে স্কুল ভবনে যেতে হলে যাতায়াত করতে হয় কয়েকটি বাড়ি ভেতর দিয়ে ও জমির আল ধরে। এ অবস্থা উপজেলার পাত্রখাতা গ্রামের পূর্ব চর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক ও ১০৪ জন শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথ ছিল ওয়াবদা খালের বাঁধ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ওই পথ ব্যবহার করতেন। কিন্তু পথটির ওপর থাকা সরকারি খাসজমি কয়েক বছর আগে বন্দোবস্ত দেওয়ার পর ধীরে ধীরে সেখানে স্থাপনা গড়ে ওঠে। ফলে স্কুলের একমাত্র যাতায়াতের পথ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
স্বাভাবিক যাতায়াতের পথ না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই সড়কের ধারে পাঠদান করতে হচ্ছে।
মোছা. রিয়াদ বিন রানু, প্রধান শিক্ষক, পূর্ব চর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটিতে টিনশেড ঘর ও বসতি। সড়কের ধারে গাছের ছায়ায় বসানো হয়েছে ছোট ছোট বেঞ্চ। শিক্ষকেরা সেখানে বসেই পাঠদান করাচ্ছেন। চারদিকে যানবাহনের শব্দ, ধুলা আর গরমে ক্লাস নেওয়ার পরিবেশ বলতে কিছু নেই।
চতুর্থ শ্রেণির সুমাইয়া খাতুন বলে, রাস্তা না থাকায় পাশের দুটি বাড়ির ভেতর দিয়ে আসতে হয়। বাড়ির লোকজন অনেক সময় আসতে নিষেধ করেন। এ জন্য অনেকে স্কুলেই আসে না।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক শাহ্ আলম বলেন, ১৯৮৮ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে এটি সরকারীকরণ হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ওয়াবদা খালের বাঁধই ছিল একমাত্র পথ। এখন সেই পথ বন্ধ হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
বিদ্যালয়ের জমিদাতা ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য সেকেন্দার আলী। তিনি বিদ্যালয়ের নামে ৩৫ শতাংশ জমি দান করেন। রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত বাঁধটি ছিল সরকারি খাসজমি। ওই খাসদাগেই ২০১৬ সালে পাত্রখাতা মাস্টারের হাট এলাকার জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে ১৫ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেন। পাশাপাশি পাশের ৩১৩৭ দাগেও তিনি ২১ শতাংশ জমি বরাদ্দ পান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার পর স্কুলে যাওয়ার রাস্তার মাথায় মাটি ভরাট করে সেখানে স্থাপনা গড়ে তোলেন জাহাঙ্গীর আলম। এতে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মনসুর আলী বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথ বন্ধ করা স্পষ্ট অনিয়ম এবং এ নিয়ে কথা বলায় অতীতে তিনি প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি স্কুলের রাস্তা বন্ধ করেননি। রাস্তার জন্য বরাদ্দ এলে প্রয়োজনে জায়গা ছেড়ে দেবেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রিয়াদ বিন রানু বলেন, স্বাভাবিক যাতায়াতের পথ না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই সড়কের ধারে পাঠদান করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামানের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি প্রশিক্ষণে আছেন বলে সংযোগ কেটে দেন।
পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, স্কুলে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ও গাছতলায় পাঠদান করা হচ্ছে এই বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জেনেছেন। পরে তাঁকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বিষয়টি নজরে আনা হলে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক জানান, স্কুলের রাস্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে লোক পাঠানো হয়েছিল। সরেজমিনে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, দ্রুতই একটি সমাধান বের করা হবে।















