গরমে অসুস্থ হয়ে দাউদকান্দিতে বিদ্যালয়ে ছাত্রীর মৃত্যু

0
157
বিদ্যালয়ে অসুস্থ হওয়ার পড়লে স্কুলছাত্রী হাবিবাকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে গরমে অসুস্থ হয়ে হাবিবা আক্তার (১১) নামের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

হাবিবা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার চান্দনাগেরচর গ্রামের মো. জিয়াউল হক ভূঁইয়া ও স্কুলশিক্ষক মাকসুদা আক্তারের মেয়ে। বিদ্যালয়ে অসুস্থ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। হাবিবার বড় বোন শাহজাদী আক্তার উচ্চমাধ্যমিকে এবং ছোট বোন ফাইজা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টার পর বিদ্যালয়ের তৃতীয় ঘণ্টা শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে শিক্ষক আসার আগে প্রচণ্ড গরমে হাবিবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় সে বারবার বমি করতে থাকে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাৎক্ষণিকভাবে তার মাথায় পানি দেন এবং দ্রুত তাকে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা দেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার পথে দাউদকান্দি উপজেলার বলদাখাল এলাকায় তার মৃত্যু হয়। পরে অভিভাবকেরা হাবিবাকে দাউদকান্দির একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাবিবার চাচা আরিফুল হক ভূঁইয়া বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে হাবিবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বলদাখাল এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ তার নাক-মুখ-চোখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। একপর্যায়ে তার মৃত্যু হয়।

হাবিবা আক্তার

হাবিবার মামা স্কুলশিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, এটা নিশ্চিত যে বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাবিবা হিটস্ট্রোক করে মারা গেছে। এ ছাড়া নাক-মুখে রক্তের কারণেও ধারণা করা যায়, সে স্ট্রোক করেছে।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, কী কারণে ওই ছাত্রী মারা গেছে, তা প্রাথমিকভাবে বলা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমের কারণে হিটস্ট্রোক বা খাবারের সমস্যা অথবা অন্য কোনো কারণে এ সমস্যা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে না।

গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম বলেন, বিষয়টি কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিনুল হাসানকে জানানো হয়েছে।

দাউদকান্দি মডেল থানার গৌরীপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক মো. উমর ফারুক ও পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী উপপরিদর্শক মো. বোরহান উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিদ্যালয়ের শ্রেণিশিক্ষক কাওসার শিকদার বলেন, হাবিবা ষষ্ঠ শ্রেণির ‘খ’ শাখার শান্ত স্বভাবের ছাত্রী ছিল। তার হঠাৎ অসুস্থতাজনিত মৃত্যু তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

মৃত হাবিবার লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর স্বজনদের আহাজারি। মঙ্গলবার দুপুরে তিতাস উপজেলার চান্দনাগেরচর গ্রামে
মৃত হাবিবার লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর স্বজনদের আহাজারি। মঙ্গলবার দুপুরে তিতাস উপজেলার চান্দনাগেরচর গ্রামে

এদিকে মাগরিবের নামাজের পর চান্দনাগেরচর গ্রামে জানাজা শেষে হাবিবার লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় হাবিবার স্কুলশিক্ষকসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.