এ বছর রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন। এর মধ্যে আছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৭১ শতাংশ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এক বা একাধিক বিপৎসংকেত নিয়ে। এগুলোর মধ্যে আছে: পাতলা পায়খানা, বমি, পেটব্যথা ও খিঁচুনি।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) যৌথভাবে এই গবেষণা করেছে। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে এত বড় গবেষণা দেশে এর আগে হয়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফল ঠিক হচ্ছে না। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও ফল ঋণাত্মক হচ্ছে। এ ধরনের ফলাফলকে বলা হয় ‘ভুল ঋণাত্মক’ বা ফলস নেগেটিভ। এনএসওয়ান ও আইজিএম পরীক্ষার ফল ঋণাত্মক হওয়া ৫০ জনের নমুনা আবার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, ১৭টি বা ৩৪ শতাংশ ফলাফল ছিল ‘ভুল ঋণাত্মক’। অর্থাৎ ওই ১৭ শিশুর ডেঙ্গু থাকলেও এনএসওয়ান ও আইজিএম পরীক্ষায় তা শনাক্ত হয়নি। গতকালের অনুষ্ঠানে রোগ শনাক্তের পরীক্ষা নিখুঁত হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মো. মোস্তাফিজুর রহমান। গবেষণায় এ বছরের জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া ১ হাজার ৩৯ শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ৭২২ শিশুর রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের মধ্যে ১০৪ জনের রক্ত ও নাসিকা সোয়াবের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়, শিশুরা কোন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তা জানার জন্য।
গবেষণার ফলাফল
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া ১ হাজার ৩৯ শিশুর মধ্যে ৮৭ শতাংশ বা ৯০৪ জন শিশু ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। বাকি ১৩ শতাংশ বা ১৩৫ শিশু এই হাসপাতালে এসেছিল রাজধানীর বাইরে থেকে। ঢাকার রোগীর ৮২ শতাংশ ঢাকা উত্তর সিটির এবং ১৮ শতাংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকার।
৭২২ জন শিশুর রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে জ্বরের পাশাপাশি এক বা একাধিক বিপৎসংকেতসহ। এসব সংকেতের মধ্যে আছে পাতলা পায়খানা, বমি, পেটব্যথা ও খিঁচুনি। ১০ শতাংশ রোগীর অন্য রোগও ছিল। ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে ১৭ জন মারা যায়।
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন: ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। সংগৃহীত নমুনা থেকে ভাইরাসের জিন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ শিশু ডেঙ্গুর ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত হয়েছে। বাকি ১৩ শতাংশ শিশু আক্রান্ত হয়েছে ডেন-৩ ধরনে। গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা।
আরও ১০ মৃত্যু
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত) সারা দেশে আরও ২ হাজার ৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা হলো ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৫১। এর মধ্যে ঢাকা শহরের বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি রোগীর মধ্যে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হলো ১ হাজার ১৫৮ জনের।