‘গণতন্ত্র-মানবাধিকারে নজর কম ট্রাম্পের, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাণিজ্যকেন্দ্রিক’

0
13

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় ছিল বলে অনেকে মনে করেন। তবে এমন ধারণাকে স্রেফ ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের গতিপথ বদলে গেছে। জো বাইডেন প্রশাসনের মত মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নয়, ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকার ব্যবসা বাণিজ্য বলে মনে করেন কুগেলম্যান।

যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সব বিদেশি সাহায্য স্থগিত করেছেন। ইউএসএইড ভেঙে দিয়েছেন। তিনি ‘নেশন বিল্ডিং’ পছন্দ করেন না। তাই বাইডেন প্রশাসনের দেয়া প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের সঙ্গে খাপ খাবে না।

গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকারের মতো বিষয়গুলো এখনো দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কুগেলম্যান বলেন, এগুলো ইতিহাস হয়ে গেছে। ট্রাম্প কেবল স্বার্থনির্ভর নীতি মানেন। মানবাধিকার বা গণতন্ত্র তার অগ্রাধিকার নয়। তিনি লেনদেনভিত্তিক ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন।

তিনি আরও বলেন, আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে বাংলাদেশ খুব একটা নেই। সেটা হয়তো ভালোও হতে পারে। কারণ নজরে থাকা দেশ যেমন ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার উত্থান নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আশংকা প্রসঙ্গে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, গত এক বছরে ধর্মভিত্তিক ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো বেশি রাজনৈতিক পরিসর পেয়েছে। যদি তারা গণতন্ত্রবিরোধী বা সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়ায় তখনই সমস্যা হবে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদ সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। বাংলাদেশ অতীতে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটিকে গুরুত্ব সহকারে নজরদারি করতে হবে। প্রতিশোধমূলক রাজনীতি ও চরম মেরুকরণ বাংলাদেশে বড় ঝুঁকি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি রয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। তবে নির্বাচনের সময় সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই যায়।

অপরদিকে, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা পাহাড়সম। তাছাড়া, এই সরকারের সময় মানুষের অস্থিরতা বাড়লেও আগের চেয়ে জনগণের স্বাধীনতা বেড়েছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে এই দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাচন যথাসময়ে ও সুষ্ঠুভাবে হওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় নতুন অস্থিরতার ঝুঁকি রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু তা এখনো অনেক বাকি। তাই নতুন সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ ও প্রত্যাশা থাকবে।

সবশেষে নতুন শুল্কনীতির পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কিনতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েছে বলেও জানান মাইকেল কুগেলম্যান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.