পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে কাউন্সিল করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ। এই নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল হক নুর এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন রাশেদ খান।
সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে প্রতীম জামান টাওয়ারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোটার ছিলেন ২১৬ জন। রাত ১০টায় ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বোর্ডের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
এদিকে কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা নিয়েও নাটকীয়তা চলেছে। গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হকের অনুসারীদের ঘোষিত এই কাউন্সিলে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার সমর্থকরা। কিন্তু শেষ সময়ে রেজা কিবরিয়ার ঘোষিত সদস্য সচিব হাসান আল মামুন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এই নির্বাচনে সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে সভাপতি পদে নুরুল হক নুর নির্বাচিত হয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে আহ্বায়কের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা রাশেদ খান নির্বাচিত হয়েছেন।
উচ্চতর পরিষদ পদে ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮ জন জয়ী হয়েছেন। তারা হলেন- আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, হানিফ খান সজীব, শহীদুল ইসলাম ফাহিম, ফাতেমা তাসনীম, আব্দুজ জাহের, জসিম উদ্দিন আকাশ ও সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী।
ভোট উপলক্ষে জামান টাওয়ারে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী সমবেত হয়েছিলেন। তবে নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি। কেউ কেউ বলেছেন, দুই গ্রুপ হওয়াতে পার্টি ক্ষতিগ্রস্থ হলো।
জোনাব আলী নামে এক কর্মী বলেন, ‘যাই বলেন আমরা সবাই ইয়াং। কিন্তু আজকে গণঅধিকার পরিষদের যেমন শক্তি প্রদর্শন হওয়ার কথা ছিল, সেটা কিন্তু দেখলাম না। এর কারণে বিভক্তি।’
গত ২ জুলাই গণঅধিকার পরিষদের জাতীয় কাউন্সিল ও উচ্চতর পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ৪ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয় গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলামকে। নির্বাচন কমিশনার করা হয় সহকারী আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৌফিক শাহরিয়ার, সহকারী আহ্বায়ক মাহবুব জনি ও সদস্য তোফাজ্জল হোসেনকে।
সোমবার সকাল ১১টায় ড. রেজা কিবরিয়ার অনুসারীরা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল। তারা সংঘর্ষ এড়াতে বিক্ষোভ স্থগিত করে নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদকে আলোচনায় আহ্বান জানান। তবে শেষ পর্যন্ত কাউন্সিল বন্ধ করেনি নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হাসান বলেন, ‘অনেকে আশঙ্কা করছেন- আমাদের কর্মসূচি না কি অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আমরা কোনো অস্থিরতা বা অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা চাই না। সেই সঙ্গে আমরা ঐক্যের পক্ষে থাকতে চাই। তাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাসান আল মামুনের পরামর্শে ১০ তারিখের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি। সেই সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্র থেকে বিচ্যুত সহযোদ্ধাদের অবৈধ ও একপেশে কাউন্সিল বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। অন্যথায় যারা কাউন্সিলের নামে গ্রুপিং করছেন তারা এই দলের ভাঙনের জন্য দায়ী থাকবেন। আর কাউন্সিল বন্ধ করে আমরা তাদেরকে আলোচনাও আহ্বান জানিয়েছি।’
২০২১ সালে গণঅধিকার পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলেছে দলটি। সোমবার নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দলটি প্রথম কমিটি পেল। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার আগেই দলে দেখা দিয়েছে ভাঙন।