খুলনায় কারাগার থেকে সেই প্রসূতি ও নবজাতককে হাসপাতালে ভর্তি, জামিন নামঞ্জুর

0
15
কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে মা শাহাজাদী ও তাঁর নবজাতক মেয়ে। রোববার আদালত প্রাঙ্গণে

খুলনা জেলা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় মা শাহজাদী ও তাঁর ১২ দিন বয়সী কন্যাসন্তানকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে গতকাল রোববার রাতেই তাঁদের পৃথক কেবিনে রাখা হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে আজ সোমবার সকালে খুলনা অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মা শাহজাদী ও তাঁর মা নার্গিস বেগমের জামিন আবেদন করা হয়। তবে আদালতের বিচারক মো. আনিসুর রহমান তা নামঞ্জুর করেন।

শাহজাদীর আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান জানান, মামলায় মানব পাচারের অভিযোগ থাকায় নিম্ন আদালতের জামিনের এখতিয়ার নেই। তাই জামিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আদালতের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পর আগামীকাল মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবার জামিন আবেদন করা হবে।

নবজাতক চুরির অভিযোগে দায়ের হওয়া একটি মামলায় গতকাল শাহজাদীকে খুলনা অতিরিক্তি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর শাহজাদী ও তাঁর মেয়েকে গতকাল বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়।

খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, গতকাল রাতে শাহজাদী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া শিশুর বয়স মাত্র ১২ দিন। বাচ্চা ছোট আবার সিজারের রোগী, তাই তাঁরা কারাগারে রেখে আর ঝুঁকি নিতে চাননি। চিকিৎসকের পরামর্শে রাতেই তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর শাহজাদী যে হাসপাতালে ছিলেন, সেই একই হাসপাতাল থেকে আরেক প্রসূতির চার দিন বয়সী ছেলে নবজাতক চুরি হয়। শাহজাদীর মা নার্গিস বেগমের কাছ থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার করা হয় এবং তখনই তিনি আটক হন। নার্গিস বেগম পুলিশকে জানিয়েছিলেন, মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে তিনি এমনটা করেছিলেন।

শাহজাদীর আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান বলেন, শাহজাদী পঞ্চমবারের মতো কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন। পরিবার ও স্বামীর পক্ষ থেকে সন্তান ছেলে হওয়ার প্রত্যাশার চাপ ছিল। কন্যা হলে তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সন্তান জন্মের পর স্বামী শাহজাদীকে আর ঘরে নিতে চাননি, হাসপাতাল থেকেও ছাড়াবেন না বলে হুমকি দেন। শাহজাদীর মা একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, কড়া মাত্রার ওষুধ সেবন করেন। তিনি হাসপাতাল থেকে ছেলে নবজাতককে চুরি করে গ্রামের বাড়িতে যান। বাড়ির লোকজন বুঝতে পেরে শিশুটিকে আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে আনেন। পুলিশ খুলনার রূপসা থেকে উদ্ধার করেছে বলে যেটা বলছে, সেটা সত্য নয়। পুলিশ অযথা ক্রেডিট নিচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানা–পুলিশের এসআই শাহীন কবির বলেন, বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারাধীন। সিদ্ধান্ত আদালত থেকেই আসতে হবে।

চুরি হওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুজন মানব পাচার আইনে মামলা করেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমার সন্তান জন্মের পর বুকের দুধ পাচ্ছিল না। শাহজাদী শিশুকে বুকের দুধ খাইয়েছেন। পরে জানতে পেরেছি, যিনি শিশুটিকে নিয়েছিলেন, তিনি শাহজাদীর মা, মানসিক রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে আমার সন্তান ফিরে পেয়েছি, আর কোনো অভিযোগ নেই। আমি মামলা চালাতে চাই না। উকিলকে সব বলেছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.