খুন হওয়ার আগে ইরান, ইসরায়েল ও ইসলাম নিয়ে কী বলেছিলেন চার্লি কার্ক

0
7
ইউটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত দর্শকদের দিকে টুপি ছুড়ে দিচ্ছেন চার্লি কার্ক। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সুপরিচিত রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্ককে গত বুধবার ইউটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

৩১ বছর বয়সী কার্ক ছিলেন জনপ্রিয় রক্ষণশীল পডকাস্টার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবশালীদের একজন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কার্কের অনুষ্ঠানগুলোতে রাজনীতি ও সাংস্কৃতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ জানাতেন তিনি। এসব আয়োজনে হাজারো মানুষ উপস্থিত হতেন।

কার্ক প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যের নানা ইস্যু নিয়ে কথা বলতেন। ইসলাম, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ, কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফ্রি এপস্টেইন ও সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ছিল তাঁর আলোচনার মূল বিষয়।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যাকে কেন্দ্র করে মার্কিন রক্ষণশীলদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। কার্কের ঘনিষ্ঠজন ও সহকর্মী টাকার কার্লসনের (ট্রাম্প-সমর্থক সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার) মতো কেউ কেউ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেন। তবে কার্ক নিজেকে গর্বের সঙ্গে ‘ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান জায়োনিস্ট’ দাবি করে ইসরায়েলের গণহত্যার পক্ষেই অবস্থান নেন।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কেও চার্লি কার্ক চরম অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেছেন। তাঁকে ‘যুদ্ধবাজ’, ‘পেডোফাইল’সহ নানা অপমানজনক শব্দে চিত্রিত করেন তিনি।

কার্ক বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে সমর্থন করার ব্যাপারে আমার রেকর্ড অটুট। আমি বিশ্বাস করি, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ইসরায়েলকে দেওয়া ভূমির অধিকার বৈধ। আমি বিশ্বাস করি, এ ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ হবে। আমার জীবন ইসরায়েলে বদলে গেছে। আমি ইসরায়েলের জন্য লড়ব।’

কার্ক নিয়মিত গাজা বিষয়ে ইসরায়েলি বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করতেন ও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নিষ্ঠুরতার দায় চাপাতেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের ওপর।

গাজা যখন দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছিল, তখনো কার্ক তাঁর পডকাস্টে ইসরায়েলপন্থী ব্যক্তিদের প্রচার করতেন এবং নিউইয়র্ক টাইমসসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমকে অভিযুক্ত করতেন ইসরায়েলকে ভুলভাবে সমালোচনা করার জন্য।

এক ঘটনায়, যুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া এক অপুষ্টিতে ভোগা ফিলিস্তিনি শিশুর ছবি নিয়ে বিতর্ক ছড়ান তিনি। খবর বের হয়েছিল, ওই শিশু সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। কিন্তু কার্ক ও ইসরায়েলপন্থীরা দাবি করেন, শিশুটি আসলে দুর্ভিক্ষে নয়, রোগে ভুগছে। এ যুক্তি দেখিয়ে গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে না বলে প্রচার করেন তাঁরা।

তবে গাজায় গণহত্যা শুরু হওয়ার আগেই কার্ক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বর্বরতায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য

কার্ক যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর কল্পিত ‘খ্রিষ্টধর্মকেন্দ্রিক জীবনধারা’ রক্ষার কথা বলতেন। এ সময়ে প্রায়ই ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করতেন। যেমন বলেছেন, তিনি চান না, তাঁর সন্তানেরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে কখনো আজানের ধ্বনি শুনুক।

ইসরায়েলকে সমর্থন করার ব্যাপারে আমার রেকর্ড অটুট। আমি বিশ্বাস করি, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ইসরায়েলকে দেওয়া জমির অধিকার বৈধ। আমি বিশ্বাস করি, এ ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ হবে। আমার জীবন ইসরায়েলে বদলে গেছে। আমি ইসরায়েলের জন্য লড়ব।

চার্লি কার্ক, ট্রাম্পের সদ্যপ্রয়াত প্রভাবশালী মিত্র

কার্ক আরও বলেন, ‘পশ্চিমে আধ্যাত্মিক লড়াই শুরু হয়েছে। শত্রুরা হলো “ওক-বাদ” কিংবা মার্ক্সবাদ, যারা “ইসলাম”-এর সঙ্গে মিলে আমাদের মার্কিন জীবনধারা আক্রমণ করছে।’

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কেও কার্ক চরম অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করেন। তাঁকে ‘যুদ্ধবাজ’, ‘পেডোফাইল’সহ নানা অপমানজনক শব্দে চিত্রিত করেন তিনি।

গাজায় গণহত্যা তীব্রতর হওয়ার পর কিছু রক্ষণশীল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ইসরায়েলের সমালোচনা শুরু করলে ইসরায়েলপন্থীরা তাঁদের ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দেন। কার্কের অভিযোগ ছিল, ‘ইসরায়েলের কোনো বিষয়ে আমি সামান্য ভিন্নমত দিলেই অনেকে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আমাকে আর সমর্থক মনে করেন না।’

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যাকে কেন্দ্র করে মার্কিন রক্ষণশীলদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। কার্কের ঘনিষ্ঠজন ও সহকর্মী টাকার কার্লসনের মতো কেউ কেউ প্রকাশ্যে ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেন। তবে কার্ক নিজেকে গর্বের সঙ্গে ‘ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান জায়োনিস্ট’ দাবি করে ইসরায়েলের গণহত্যার পক্ষেই অবস্থান নেন।

গত আগস্টে ‘মেগিন কেলি শো’তে কার্ক তাঁর সহকর্মী রক্ষণশীল ভাষ্যকারকে বলেন, ‘আপনি ইসরায়েলকে সমালোচনা করতে পারবেন না। আমি যদি সামান্য ভিন্নমত দিই, তবে বলা হয়, চার্লি আমাদের সঙ্গে নেই।’

ইরান প্রশ্নে অবস্থান

তবে দুটি বড় বিষয়ে কার্ক মার্কিন রক্ষণশীলদের মধ্যে প্রচলিত ইসরায়েলপন্থী অবস্থান থেকে ভিন্নমত দেন।

গত জুনে ইসরায়েল যখন ইরানকে আক্রমণ করে, কার্ক প্রশ্ন তোলেন, এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কতটা যৌক্তিক।

কার্ক ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের আগে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেশটির সরকারগুলোকে প্রভাবিত করেছিল, যা মার্কিনবিরোধী মনোভাব উসকে দেয়, সে সম্পর্কেও খোলাখুলি কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা মোসাদ্দেককে সরিয়ে দিয়েছিলাম ও শাহকে বসিয়েছিলাম। এর ফলেই ইরানে “আয়াতুল্লাহদের” উত্থান ঘটেছিল।’

এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কার্ক ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেকের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর ১৯৭৯ সালে মার্কিন-সমর্থিত শাহকেও উৎখাত করেন ইরানিরা।

কার্ক প্রশ্ন তোলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ইরান কি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি? হতে পারে। তবে এটা ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা? ভারত, পাকিস্তানের তো পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তাহলে ইরানের জন্য আবার নতুন যুদ্ধ বেঁধে দেওয়া কি জরুরি?’

কার্ক আরও বলেন, ‘যাঁরা, ধরে নিই, যেকোনোভাবে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করা থেকে বিরত রাখার পক্ষপাতী, তাঁরা হলেন সেই একই ব্যক্তি, যাঁরা ইরাকযুদ্ধের পরিকল্পনাকারী ছিলেন।’ ইরানকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অচলাবস্থার জন্ম দিতে পারে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.