চার্জার ফ্যানের দাম বাড়ল যে কারণে

0
115

তীব্র গরমে রাজধানীতে ফ্যান বিক্রি বেড়েছে। চাহিদার কারণে বেড়েছে ফ্যানের দামও। অপরদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে মফস্‌সলে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে।

বিক্রেতার বলছেন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার জটিলতার কারণে বেশি দামে এসব ফ্যান বিক্রি করতে হচ্ছে।

ঢাকার নবাবপুর এলাকায় ইলেকট্রনিকস পণ্যের আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতাদের দোকান রয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ওই এলাকায় ইলেকট্রনিকস পণ্যের বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় দেখা যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিলিং, টেবিল এবং স্ট্যান্ড ফ্যানের চাহিদা বেশি। অনেক দোকানে চার্জার ফ্যানও বিক্রি হচ্ছিল।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা খন্দকার লিটন পল্টনের বিজয়নগর এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গরমের কারণে নবাবপুরের তাজ ইলেকট্রিক মার্কেট থেকে দেশীয় ব্র্যান্ডের একটি চার্জার ফ্যান কেনেন।

খন্দকার লিটন বলেন, ‘আমি যে চার্জার ফ্যানটি কিনলাম, সেটি গত মাসেও আমার এক সহকর্মী এই মার্কেট থেকে কিনেছিল। তাঁর কাছ থেকে দাম রাখা হয়েছিল ৩ হাজার ৫০০ টাকা। আজকে আমাকে কিনতে হলো চার হাজার টাকায়।’ গরম ও লোডশেডিংয়ে সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দাম রাখছেন বলে অভিযোগ তাঁর।

চীন থেকে চার্জার ফ্যান আমদানি করেন নবাবপুরের এমন কয়েকজন আমদানিকারক জানান, গরম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে ফ্যানের চাহিদাও বেড়েছে। আর লোডশেডিংয়ের কারণে এখন মফস্‌সলের খুচরা বিক্রেতারাও চার্জ দিয়ে ব্যবহার করা যায়, এমন ফ্যানের চাহিদা দিচ্ছেন। তবে আমদানিকারকদের হাতে খুব বেশি চার্জার ফ্যান মজুত নেই।

নবাবপুরে মোজাম্মেল ইলেক্ট্রিকস্‌ মার্কেটের আমদানিকারী প্রতিষ্ঠান খান ইলেকট্রিকের মালিক মামুন খান  বলেন, ‘তিন মাস আগে আমরা চীন থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রায় দুই হাজার চার্জার ফ্যান আমদানি করেছিলাম। এখন একটিও নেই। তিন দিন আগে সোমবার সবগুলো বিক্রি হয়ে যায়।’

দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে মামুন খান বলেন, চার্জার ফ্যানের ধরনভেদে একেকটিতে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতা, জাহাজভাড়া বৃদ্ধি সর্বোপরি চাহিদা—এসব কিছু মিলিয়েই দাম বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।

নবাবপুর এলাকায় ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রি করে এমন ছোট-বড় প্রায় ৪১টি ভবন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। এসব দোকানে পাইকারি ও খুচরা পণ্য বিক্রি করা হয়।

ওই এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, গরমকালে এমনিতে ফ্যান বিক্রি বাড়ে। এ বছর লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার ফ্যানের চাহিদাও বেড়েছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বিক্রেতাদের অনেকে কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ঈদ আর গরম এই দুটো মিলিয়ে বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না।

দামের বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, বেচাবিক্রি নিয়ন্ত্রিত দামের মধ্যেই হচ্ছে। এর কারণ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বাজার তদারকি। একেকটি চার্জার ফ্যানে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। এর পেছনে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি একটি বড় কারণ।

ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়ার সময় অনেককে ফ্যান কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন শ্রেণির একটি বগির আসনে বসে ছিলেন রোমানা আক্তার। ট্রেনের ভেতরে গরম লাগায় সঙ্গে থাকা চার্জার টেবিল ফ্যানটি চালু রেখেছিলেন তিনি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

রোমানা আক্তার বলেন, ‘শুনেছি গ্রামে অনেক লোডশেডিং হচ্ছে। তাই বাড়ি যাওয়ার আগে গত মঙ্গলবার নিউমার্কেট থেকে তিন হাজার টাকায় এই ফ্যানটি কিনেছি। যদি দেখি গরমে আব্বা-আম্মার (গ্রামে থাকেন) কষ্ট হচ্ছে, তাহলে ঢাকায় ফেরার সময় ফ্যানটি তাদের জন্য রেখে আসব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.