প্রায় বাড়িতে নেই ওয়াসার সংযোগ

0
112
খুলনা সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের যেখানে–সেখানে বর্জ্য ফেলা হয়। পুরোনো দত্তবাড়ি পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে বর্জ্য ফেলে। ১৩ মে খুলনার দৌলতপুর এলাকায়

জমির মূল্য বেশি থাকায় অনেক ব্যক্তিগত পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় মানুষের নিত্যব্যবহার্য পানির অনেক সংকট রয়েছে।

দৌলতপুরের দেয়ানা-পাবলা বাউন্ডারি সড়কের কিছু দূর পরপর বৈদ্যুতিক খুঁটির গোড়ায় ময়লার স্তূপ। এলাকাটি নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। ওই ওয়ার্ডের পূর্বে পাবলা এলাকা, ৬ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা। পশ্চিমে আড়ংঘাটা, ক্ষুদের খাল। উত্তরে দৌলতপুর থানা এবং দক্ষিণে রায়েরমহল সেতু ও লিংক রোড। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। প্রায় ২৫ হাজার জনসংখ্যার এই ওয়ার্ডে বর্তমানে ভোটার ১২ হাজার ৯২০ জন।

১০ মে ওই ওয়ার্ডের দেয়ানা পূর্বপাড়া, মধ্যপাড়া, উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মোল্লাপাড়া, মোড়লপাড়া ও বন্দপাড়া ও হাসপাতাল মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় ধানখেত, ধানের গোলা ও মাছের ঘের। অনেক রাস্তার ওপরেই ধানমাড়াইয়ের খড় বিছানো। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে মূলত আদি বাসিন্দাদের বসবাস বেশি।

সড়কের আইয়ুব কমিশনারের মোড়ের চায়ের দোকানে কথা হয় পূর্বপাড়ার শেখ মোহাম্মদ মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনার দুর্ভোগ তো আছেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা পানির। গভীর নলকূপে কোনো পানি ওঠে না। অগভীর নলকূপের পানিতে প্রচুর আয়রন আর আর্সেনিক। ওয়াসার পানির লাইন মূল সড়ক দিয়ে গেছে, তবে কোনো বাড়ির ভেতরে লাইন এখনো যায়নি। কিছু বাড়িতে পাম্প আছে। সেখান থেকেই পানি নিয়ে কোনো রকম চলছে আমাদের।’

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সমস্যার পাশাপাশি এলাকায় মাদকের দৌরাত্ম্য আছে। আছে সড়কবাতির স্বল্পতা। ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের লোক আর নিজের এলাকাকে প্রাধান্য দেন কাউন্সিলর। ওয়ার্ডের সব কাজের ঠিকাদারি করেন তাঁর ভাই ও আত্মীয়স্বজন। ফলে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে টানা দুবারের কাউন্সিলর মো. কবির হোসেন বলেন, ‘প্রতিশ্রুতির ৮০ ভাগ কাজ করতে পেরেছি। করোনার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে হয়েছে। জলাবদ্ধতার যে সমস্যা ছিল, চলমান কাজ শেষ হলে তা আর থাকবে না। রাস্তাঘাটের কাজও অনেকটা হয়ে গেছে। অনেক কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আছে। তবে এলাকার ৮০ শতাংশ বাড়িতে ওয়াসার লাইন নেই। লাইন পাওয়ার জন্য আমাদের তরফ থেকে যা করার প্রয়োজন তা করা হচ্ছে।’

সুপেয় পানির সংকটে ৫ নম্বর ওয়ার্ডবাসী

নগরের দৌলতপুর পাবলা মৌজায় দত্তবাড়ি এলাকায় একটি বাড়ির দেয়ালে জেলা প্রশাসকের একটি নোটিশ টানানো। তাতে লেখা, ‘এই সম্পত্তির মালিক বাংলাদেশ সরকার’। ৩ দশমিক ৩ একর ওই জায়গা সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে হাজারখানেক পরিবার বসবাস করছে। সরকারের ওই সম্পত্তির মধ্যে ৪০ শতকের একটি পুকুর আছে। দত্তবাড়ির পুকুর নামে পরিচিত ওই পুকুরের অনেক অংশ দখল হয়ে গেছে। বছর ১৫ আগেও ওই এলাকার মানুষ পুকুরটির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। পুকুরটি পুনঃখননের দাবি দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, এই পুকুরের পানি মানুষ সব কাজে ব্যবহার করতেন। পুকুরটা নানা সময় পুরোটাই দখলের চেষ্টা হয়েছে, তবে শেষ পর্যন্ত এখনো টিকে আছে। এ ছাড়া জমির মূল্য বেশি থাকায় এই ওয়ার্ডের অনেক ব্যক্তিগত পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় মানুষের নিত্যব্যবহার্য পানির অনেক সংকট রয়েছে।

দৌলতপুর থানা এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। ওয়ার্ডটির উত্তরে সাতক্ষীরা রোড এবং রেললাইন অতিক্রম করে পুরোনো স্টিমারঘাট পর্যন্ত। দক্ষিণে পাবলা মেইন রোড, প্রতাপাদিত্য রোড ও লঞ্চঘাট রোড। পূর্বে ভৈরব নদ এবং পশ্চিমে দেয়ানা বাউন্ডারি রোড। ভোটার ১১ হাজার ৪২৩ জন।

১১ মে ওই ওয়ার্ড ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ার্ডের প্রধান সংকটের মধ্যে সুপেয় পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট অন্যতম। ওয়ার্ডের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর বাজার এখন জৌলুশ হারিয়েছে। বাজার রক্ষা বাঁধ না থাকায় ব্যবসায়ীরা অস্তিত্বসংকটে রয়েছেন। কিছু জায়গায় মূল সড়ক দিয়ে ওয়াসার লাইন গেলেও বণিকপাড়া, বাউন্ডারি রোডসহ বড় কিছু সড়কে পাইপ পর্যন্ত যায়নি।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘রাস্তাঘাট, ড্রেনের উন্নয়নকাজ হয়েছে। আঞ্জুমান সড়ক আর আইয়ুব আলী সড়কে ড্রেনের কাজ শেষ হলে ড্রেনেজ–ব্যবস্থার তেমন সমস্যা থাকবে না। দৌলতপুর বাজার রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং দত্তবাড়ির পুকুর সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই এটা টেন্ডারে যাবে।’

পানির সংকটের বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, ‘পুরোনো নলকূপগুলোতে গরমের সময় পানি পাওয়া যায় না। আর পাঁচ বছর ধরে বহু আবেদন করেও সর্বোচ্চ ১ শতাংশ বাড়িতে ওয়াসার পানির সংযোগ হয়েছে। এখন বড় একটা সংকট হচ্ছে, ওয়াসার অনুমতির পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের রাস্তা কাটার অনুমতি না থাকলে ওয়াসার লাইন দেওয়া হয় না। এই দুটি করতে গ্রাহকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.