খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর উত্তেজনা, ১৪৪ ধারা

0
7
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।ছবি সংগীত
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
 
এ ঘটনার পর পাহাড়ি ও বাঙালিরা খাগড়াছড়ি সদরে আবার মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুই পক্ষই পৃথক মিছিল বের করে। সদরের মহাজনপাড়ার কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাত করা হয়। এ ছাড়া একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি–বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত হয়।
 
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বলেন, এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে উত্তেজনা দেখা দেয়। ধর্ষণের অভিযোগে তাঁকে পিটুনি দেওয়া হয়। এরপর বেলা ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
 
নিহত শিক্ষক সোহেল রানা প্রতিষ্ঠানটির বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও সেফটি বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি সদরের খেজুরবাগান এলাকায়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সোহেল রানা কারাগারে ছিলেন। তিন মাস আগে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর একই প্রতিষ্ঠানে তিনি যেন আবার যোগদান না করেন, সে জন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল। এরপর আজ আবার তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল।

ছাত্রী ধর্ষণ অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানা
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে সোহেল রানাকে অধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে ১০–১৫ জন তরুণ অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় তাঁকে পুলিশসহ কয়েকজন রক্ষা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
 
খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
 
ঘটনার পর দুই পক্ষের উত্তেজিত লোকজন খণ্ড খণ্ড পক্ষে বিভক্ত হয়ে সদরে মহড়া দিতে শুরু করেন। দুই পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল বাতেন মৃধা বলেন, ‘উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে গিয়ে আমিও মার খেয়েছি। এখন ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাকর।’
 
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মো. মামুন নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মামুনের স্ত্রী হত্যা মামলা করেন পলাতক তিন আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। তবে মামুনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি–বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে আগুন দেওয়া হয় দোকানপাটে। সংঘাতে দীঘিনালায় ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি মারা যান। ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর এ ঘটনার জের ধরে রাঙামাটিতে সংঘর্ষ হয়। সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। অনিক কুমার চাকমা নামের একজনকে পিটিয়ে মারা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরে তা তুলে নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দুই জেলায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.