খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার বিচার, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, আটক ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী ভান লাল রোয়াল বমের মৃত্যুর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় এ প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা।
সমাবেশে জগদীশ চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেটি শুধু ধর্ষণ নয়, এটি আদিবাসীদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। তিনি আরও বলেন, আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ, ভূমি দখল, সাম্প্রদায়িক হামলা ও গণহত্যার মাধ্যমে এ দেশের পথপরিক্রমায় পরিবর্তিত সব শাসকই আদিবাসীদের অস্তিত্বকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করে গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে কেএনএফ দমনের নামে সাধারণ নিরীহ বম জনগোষ্ঠীকে জেলে রেখে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘যারা ধর্ষণ করেছে তাদের একটা রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলকে সেই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। তারা সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের মুখে হাসি দেখেছি। কারণ, তারা ভালো করেই জানে, আইন তাদের কিছু করতে পারবে না। আইন, প্রশাসন সব সেই সেটেলারদের হাতে।’
বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে দীপায়ন খীসা বলেন, ‘আপনার আমলে তিনজন নিরীহ বম চিকিৎসার অভাবে কারাগারে মারা গেছে। আপনাকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, একটা ত্রিপুরা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে, অথচ রাষ্ট্র এখনো নিশ্চুপ। উল্টো যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন তাঁদের ওপর অন্যায়ভাবে লাঠিচার্জ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অর্থ সম্পাদক জানোকি চিসিম বলেন, ‘জুলাই–পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত একটা মামলারও সমাধান হয়নি। বরং আমরা দেখতে পাই, ধর্ষকেরা হেসেখেলে ঘুরে বেড়ায় আর সুইসাইড (আত্মহত্যা) করে আদিবাসী নারী।’
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুর্মি চাকমা বলেন, ‘আজকে আদিবাসী এবং সারা দেশের নারীদের অবাধ বিচরণের পরিবেশ চাইতে এখানে এসেছি। রাষ্ট্রের অবশ্যই আমাদের এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে, একটা আদিবাসী মেয়ে যাতে মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে।’
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।