প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে আবারও বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। দলের নেতারাই তাঁর এই কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন সংসদ সদস্য। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সংসদ সদস্যের এমন আচরণকে দেখছেন ‘ক্ষমতার দাপট’ হিসেবে।
সংসদ সদস্যের প্রদর্শিত অস্ত্র বৈধ নাকি অবৈধ, তা নিশ্চিত হয়েছে ২৪ ঘণ্টা পর। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এমপি মহোদয় যে অস্ত্রটি প্রদর্শন করেছেন, তা বৈধ। এটির কাগজপত্র আমাকে দিয়েছেন।’ তবে অস্ত্র বৈধ হলেও এভাবে প্রদর্শন করা যায় কি না, তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি ওসি।
জেলা প্রশাসন বলছে, অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। এর অন্যতম শর্ত অস্ত্র বহন করার ক্ষেত্রে ভয়ভীতি প্রদর্শন যাতে না হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি (সংসদ সদস্য) ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন কি না, সেটা খতিয়ে দেখব আমি।’
দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপি নেতার হত্যার হুমকির প্রতিবাদে গত সোমবার বিকেলে বাঁশখালীতে আয়োজিত সমাবেশ ও মিছিলে সংসদ সদস্য অস্ত্রটি প্রদর্শন করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজ ব্যানারের সামনে একা হাঁটছিলেন। তাঁর ডান হাতে পিস্তলটি ছিল। সামনে ছিল পুলিশ। পুলিশি পাহারার মধ্যেও মোস্তাফিজের অস্ত্র হাতে মিছিল কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, ‘সংসদ সদস্য কারও দিকে অস্ত্র তাক করেননি। হাতে নিয়ে হেঁটেছেন।’
মোস্তাফিজের যত বিতর্ক
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালে আবার নির্বাচিত হন তিনি। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে তিনি নানা বিতর্কে জড়ান। মোস্তাফিজ বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।
২০১৬ সালের ১ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারেন মোস্তাফিজুর রহমান। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পছন্দমতো ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ না দেওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। এই ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম একটি মামলা করেছিলেন। জাহিদুল এখন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম গতকাল মুঠোফোনে বলেন, ‘মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আমি নারাজি দিলে মামলাটির পুনঃতদন্ত হতো। কিন্তু এত দূর থেকে চাকরি ফেলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।’
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজের কটূক্তি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি বলে মন্তব্য করে আবার বিতর্কের সৃষ্টি করেন।
সবশেষ অস্ত্র প্রদর্শন করে আবার বিতর্কে জড়ালেন তিনি। বিষয়টিকে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হিসেবে দেখছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘অস্ত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে তিনি (সংসদ সদস্য) দলকে বিব্রত করেছেন।’ একইভাবে বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অর্থ) আবদুর রাজ্জাকও সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগকে বিব্রত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলো করেন বলে মন্তব্য করেন।
একজন সংসদ সদস্যের বিনা কারণে এভাবে অস্ত্র প্রদর্শন কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ক্ষমতার দাপটে এমনটি করেছেন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এর মাধ্যমে মহান সংসদকে অমর্যাদা করেছেন তিনি।