এক মহাকাব্যের মতো প্রায় ১৬০ বছর আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্লাব ফুটবলের। দীর্ঘ এই পথচলায় অসংখ্য কিংবদন্তির পদচারণে সমৃদ্ধ হয়েছে ক্লাব ফুটবলের রঙিন দুনিয়া। সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে খেলার ধরন, তবে গোল করার উন্মাদনা কমেনি একটুও। পুরোনো দিনের অনেক হিসাব হয়তো ঠিকঠাক রাখা হয়নি, কিন্তু আধুনিক ফুটবল মানেই তো রেকর্ড আর পরিসংখ্যানের চুলচেরা হিসাব। গোল করার সেই রেকর্ডের খাতায় এখন রাজত্ব করছেন এই সময়ের দুই মহাতারকা। ১ নম্বর স্থানটি দখল করে আছেন পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর তাঁর ঠিক পরেই আছেন আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। তবে শুধু তাঁরাই নন, ক্লাব ফুটবলে গোলের স্রোত বইয়ে দেওয়া ইতিহাসের সেরা ১০ গোলদাতার তালিকাটা একবার দেখে নেওয়া যাক।

১. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৮০০)
পেশাদার ফুটবলে সব মিলিয়ে রেকর্ড ৯৩৮ গোল করা রোনালদো ক্লাবের হয়েও গোলের তালিকায় সবার ওপরে। স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করার পর তিনি খেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস এবং বর্তমানে খেলছেন সৌদি আরবের আল নাসর ক্লাবে। তাঁর ৮০০ গোলের মধ্যে শুধু লিগগুলোতে করেছেন ৫৭২টি। এ ছাড়া কাপ ম্যাচে ৫৬ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায় তাঁর গোল ১৭২টি। চ্যাম্পিয়নস লিগেও রেকর্ড ১৪০ গোলের মালিক তিনি। রোনালদোর গোলের এই স্রোত এখনো থামেনি আর তাঁর এই অভিযান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

আন্তর্জাতিক ফুটবলের মতোই ক্লাব ফুটবলে রোনালদোর ঠিক পেছনেই আছেন তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। বার্সেলোনায় তাঁর সোনালি সময় কাটানোর পর তিনি খেলেছেন পিএসজিতে এবং বর্তমানে খেলছেন ইন্টার মায়ামির হয়ে। রোনালদোর চেয়ে ৩৮ গোল পিছিয়ে থাকা মেসির মোট গোলসংখ্যা ৭৬২। ক্যারিয়ারে শুধু লিগেই মেসির গোল ৫৩৬টি। এ ছাড়া কাপে ৭১ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায় তাঁর গোল ১৫৫টি। রোনালদোর মতো মেসিও এখনো সক্রিয় আছেন এবং তাঁর গোলের সংখ্যা যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।

১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের নায়ক রোমারিও ছিলেন এক সত্যিকারের গোলমেশিন। ১৯৮৫ সালে ভাস্কো দা গামার হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই কিংবদন্তি খেলেছেন বার্সেলোনা, ফ্ল্যামেঙ্গো ও ফ্লুমিনেসের মতো বিখ্যাত সব ক্লাবে। লম্বা ক্যারিয়ারে তিনি যেখানেই খেলেছেন, সেখানেই গোলের পর গোল করে গেছেন। লিগে তাঁর গোলসংখ্যা ৫৪৫, আর বাকি গোলগুলো করেছেন অন্যান্য প্রতিযোগিতায়। জাতীয় দলের হয়েও তাঁর গোল ৬৪টি।

অস্ট্রিয়ার কিংবদন্তি ফুটবলার জোসেফ বাইকান ১৯৩১ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ক্লাব ফুটবলে রাজত্ব করেছেন। র্যাপিড ভিয়েনা, অ্যাডমিরা ও স্ল্যাভিয়া প্রাগের মতো ক্লাবে খেলা বাইকান এই দীর্ঘ সময়ে করেছেন ৬৯০টি গোল। এর মধ্যে শুধু লিগেই তাঁর গোলসংখ্যা ৫১৫, আর বাকিটা এসেছে অন্যান্য প্রতিযোগিতা থেকে।

সর্বকালের সেরাদের একজন, ফুটবলের রাজা পেলে ক্লাব ফুটবলে করেছেন মোট ৬৭৯ গোল। তাঁর পুরো ক্যারিয়ারের বড় অংশই কেটেছে ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব সান্তোসে। এরপর তিনি খেলেছেন নিউইয়র্ক কসমসে। তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী এই তারকার ৬০৪টি গোলই এসেছে লিগ ম্যাচে। বাকি ৭৭টি গোল তিনি করেছেন অন্যান্য প্রতিযোগিতায়। পেলের আন–অফিশিয়াল গোলের সংখ্যা অবশ্য আরও অনেক বেশি।

হাঙ্গেরির সোনালি সময়ের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় ফেরেঙ্ক পুসকাস জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাবেও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিলেন। তবে ক্যারিয়ারে তিনি মাত্র দুটি ক্লাবে খেলেছেন—হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট হনভেড ও স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ। এই দুই ক্লাবের হয়ে তাঁর গোলসংখ্যা ৬৪১, যেখানে শুধু লিগেই করেছেন ৫১৬ গোল।

নর্দান আয়ারল্যান্ডের অন্যতম সেরা ফুটবলার জিমি জোন্স ১৯৪৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ক্লাব ফুটবলে সক্রিয় ছিলেন। ক্যারিয়ারে বেলফাস্ট সেল্টিক, ফুলহাম এবং গ্লেনাভোনসহ অনেক ক্লাবে খেলেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর মোট গোলসংখ্যা ৬৩০, যার মধ্যে লিগে ৩৩০ এবং কাপে ২৮৬টি গোল রয়েছে।

ক্লাব ফুটবলে গোল করার তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন আরেক আইরিশ ফুটবলার জো ব্যামব্রিক। ১৯২৬ সালে পেশাদার ফুটবলে পা রাখা এই খেলোয়াড় লিনফিল্ড, গ্লেন্টোরান এবং চেলসির মতো ক্লাবে খেলেছেন। তাঁর মোট ৬০৫ গোলের মধ্যে ৩৪৭টি এসেছে লিগ ম্যাচে।

ডাচ ফুটবলার আবে লেনস্ত্রা ৫৯১ গোল নিয়ে এই তালিকায় আছেন নবম স্থানে। ২৭ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে তিনি নেদারল্যান্ডসের বাইরে কখনোই খেলেননি। লো হেরেনফেন, এনস্কিডে এবং এনসখেদেসে বয়েজ—এই তিন ডাচ ক্লাবের হয়ে খেলেছেন তিনি। লেনস্ট্রার ৫৭৩টি গোলই এসেছে লিগে।

রোনালদো ও মেসি ছাড়া এই তালিকায় থাকা একমাত্র সক্রিয় ফুটবলার হলেন বার্সেলোনার তারকা রবার্ট লেভানডফস্কি। লেভার গোলের খিদে এখনো কমেনি। লেভার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল পোল্যান্ডের ক্লাব জনিচের হয়ে, এরপর তিনি খেলেছেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও বায়ার্ন মিউনিখের মতো ক্লাবে। এখন পর্যন্ত ৫৮৮ গোল করা এই পোলিশ স্ট্রাইকার বর্তমান ফর্ম ধরে রাখলে সামনের দিনগুলোতে আরও ওপরে উঠে আসতে পারেন। গত মৌসুমেও তিনি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫২ ম্যাচে ৪২ গোল করেছেন। ক্যারিয়ার শেষে লেভানডফস্কির গোলের সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামে, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।