ঈদের তৃতীয় সপ্তাহেও সাতটি হলে চলছে ‘ক্যাসিনো’। সৈকত নাসির পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করেছেন নিরব। ঈদের ছবিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে গত রোববার বিকেলে ‘বিনোদন’–এর সঙ্গে কথা বলেছেন এই নায়ক।
ঈদে ১৭টি হলে মুক্তি পেয়েছিল ‘ক্যাসিনো’। কতটা সাড়া ফেলল?
এ সপ্তাহেও ছবিটি সাতটি হলে চলছে। মুক্তির আগে ছবির ট্রেলার ও গান প্রকাশের পর থেকেই ছবিটি নিয়ে দর্শকের আলাদা একটা আগ্রহ ছিল। মুক্তির পর ছবিটি যাঁরাই দেখেছেন, প্রশংসা করেছেন। দর্শকেরা নাম ধরেই বলেছেন, ‘ক্যাসিনো’ নিরবের নতুন টার্নিং পয়েন্ট। আমি নিজেও মনে করি, দীর্ঘদিন পর এই ছবি আমার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা দিতে পারত। আমার ক্ষেত্রে এটি পরীক্ষায় ১০০-তে ১০০ পাওয়ার মতো ছবি। কিন্তু কিছু কারণে সেটি আর হয়নি।
কী সেই কারণ?
বড় কারণ হলো, ঈদের ছবি হিসেবে অন্যান্য ছবির সঙ্গে পুরোদমে শক্তি নিয়ে আসতে পারিনি আমরা। সব সময়ই ঈদের ছবির একটা প্রতিযোগিতা থাকে। এই ঈদে শাকিব খান, আফরান নিশোর ছবি মুক্তি পেয়েছে। শাকিব খানের ভক্ত বেশি থাকার কারণে তাঁর ছবির ওভাবে প্রচার-প্রচারণা লাগে না। কিন্তু আমাদের মতো শিল্পীদের তো প্রচার লাগে। ঈদের মাত্র ১০ দিন আগে ছবিটি মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং শেষ মুহূর্তে এসে ছবির কিছু পোস্টের কাজ বাকি ছিল। সেগুলো নিয়ে পরিচালকসহ আমি নিজেও দৌড়াদৌড়ি করেছি। এতেই সময় চলে গেছে। আরও আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে যদি ছবিটি মুক্তি দেওয়া যেত, তাহলে আরও দর্শকের কাছে পৌঁছানো যেত। সিনেমাটি ঈদের অন্যান্য ছবির সঙ্গে আলোচনা তৈরি করতে পারত।
তার মানে মুক্তিতে খুব তাড়াহুড়া ছিল?
হ্যাঁ, তা তো ছিলই। কারণ, তিন বছর আগের ছবি হলেও আবহ সংগীতসহ কালার কারেকশনের কিছু কাজ বাকি ছিল। সেগুলো একদম শেষে এসে করতে হয়েছে। কারণ, আমরা হুট করেই মুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলাম। আরও আগেই যদি সিদ্ধান্ত নিতাম, ঈদুল আজহায় ছবিটি আসবে, তাহলে পোস্টের কাজ আরও আগেই শেষ করে ফেলা যেত। ‘ক্যাসিনো’ মুক্তির বিষয়টি হয়ে গেছে, আগের রাতে পড়ে পরীক্ষার হলে যাওয়ার মতো।
মুক্তির শুরুতে প্রচারে ছবির পরিচালকসহ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের দেখা যায়নি…
বললাম তো, শেষ মুহূর্তে মুক্তির সিদ্ধান্তের কারণে সঠিকভাবে প্রচারের শিডিউল করা সম্ভব হয়নি। ছবির নায়িকা বুবলীর আরেকটি ছবি ‘প্রহেলিকা’ এই ঈদে মুক্তি পেয়েছে। আগেই ওই ছবির জন্য বুবলীর সময় দেওয়া ছিল। সেভাবেই তিনি কাজ করেছেন। কিন্তু ‘ক্যাসিনো’র জন্য আগে থেকে আমরা তাঁর সময় নিইনি। ফলে এই ছবির জন্য তাঁকে সঠিকভাবে না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। ছবির আরেক শিল্পী তাসকিন অস্ট্রেলিয়ায়। তা ছাড়া ছবির মুক্তির পরপরই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আমি ঘরবন্দী ছিলাম। সব মিলে ছবিটির সেভাবে কোনো প্রচারই করা হয়নি। আমার জন্য এটি দুর্ভাগ্য।
মুক্তির তৃতীয় সপ্তাহে এসেও ঈদের ছবি ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’র টিকিটের জন্য দর্শকের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। অনেক দিন পর ঢাকার চলচ্চিত্রে এমনটা দেখা গেছে।
গত বছর ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ঝড় তুলেছিল। একইভাবে এই ঈদে ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ খুবই ভালো যাচ্ছে। টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে। চলচ্চিত্রের শিল্পী হিসেবে এসব শুনতেই ভালো লাগে। অনেক দিন পর কিছু ছবি হল থেকে বিনিয়োগ তুলে লাভের মুখ দেখছে। বাংলা সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ বেড়েছে। এতে করে নতুন নতুন প্রযোজক ছবি বানাতে আগ্রহী হবেন। হলমালিকেরাও হল সংস্কারসহ নতুন হল তৈরিতে উৎসাহ পাবেন। বর্তমান সময়ে দর্শকের রুচির কথা বিবেচনা করে পরিচালকেরও ভালো ছবি তৈরির তাগিদ বাড়বে। এই ঈদে যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, পুরো ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
‘ফিরে দেখা’ নামে আপনার আরেকটি ছবি মুক্তি পায় গত ১৬ জুন। এটিও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।
‘ফিরে দেখা’ ৫২ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের ছবি। এ ধরনের ছবি এ সময়ে এসে সঠিকভাবে তুলে আনতে বড় বাজেট দরকার। সরকারি অনুদানের ছবিটির সেটি ছিল না। তারপরও পরিচালক ও অভিনেত্রী রোজিনা অনুদানের টাকার সঙ্গে নিজেরাও বিনিয়োগ করে কাজটি শেষ করেন। তাঁরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন।
এখন কী কাজ করছেন?
এই মুহূর্তে ‘সুস্বাগতম’ নামে নতুন একটি ছবির শুটিং চলছে। ‘কয়লা’ নামে আরেকটি ছবির শুটিং শেষ। ডাবিং বাকি আছে। এ ছাড়া ‘স্পর্শ’ নামে যৌথ প্রযোজনার একটি ছবির কলকাতার অংশের শুটিং শেষ। বাংলাদেশ অংশের শুটিং আগামী মাসে হওয়ার কথা আছে। ছবিতে আমার বিপরীতে আছেন কলকাতার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।