কোহলিদের উৎসবে ১১ জনের মৃত্যু: দায় কার—ফ্র্যাঞ্চাইজি না রাজ্য সরকারের

0
25
টিম বাস থেকে নামার সময় বিরাট কোহলির ছবি তুলতে ভক্তদের ভিড়, ছবি: এএফপি

ক্রীড়াঙ্গনে অভাগাদের অপেক্ষা ফুরানোর মৌসুম হিসেবেই শুধু এটিকে মনে রাখতেন সবাই। কিন্তু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু সমর্থকদের হুড়োহুড়ির কারণে ভারতীয় ক্রিকেটে এটিকে ট্র্যাজেডির মৌসুম হিসেবেও মনে রাখা হবে।

১৮ বছরের আইপিএল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতেছে বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পরশু রাতে আহমেদাবাদের ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে কাল ট্রফি নিয়ে বেঙ্গালুরুতে ফিরেছে চ্যাম্পিয়ন দল। বিধান সৌধ থেকে ‘ভিক্টরি প্যারেড’ করতে করতেই নিজেদের মাঠ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পৌঁছান কোহলি-পতিদার-ক্রুনালরা।

শিরোপাজয়ী দলের আগমন ঘিরে বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা কাজ করবে, তা জানাই ছিল। আট থেকে আশি—সব বয়সী মানুষ কাল রাস্তায় নেমে এসেছিলে। কিন্তু উন্মাদনা লাগাম ছাড়িয়ে যাওয়াতেই বেঁধেছে বিপত্তি।

বেঙ্গালুরুর রাস্তায় পড়ে আছে হতাহতদের জুতা–স্যান্ডেল
বেঙ্গালুরুর রাস্তায় পড়ে আছে হতাহতদের জুতা–স্যান্ডেল, ছবি: এএফপি

পদদলিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন, আহত হয়েছেন ৩৩ জন। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া হতাহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। যদিও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, আহতের সংখ্যা ৫০–এর বেশি।

মর্মান্তিক এই ঘটনায় ভারতের সর্বমহল থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হলেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব ও পরিস্থিতি সামাল দিতে গাফিলতির অভিযোগ এনে কর্ণাটক সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী পেসার মদন লাল মনে করেন, শুধু রাজ্য সরকার নয়; দায় নিতে হবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মালিকপক্ষকেও।

ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মদন লালের অভিযোগ দুটি—কয়েক দিন অপেক্ষা না করে ট্রফি জয়ের পরদিনই এত বড় আয়োজন করা এবং পদদলিত হয়ে হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরও স্টেডিয়ামের ভেতর উদ্‌যাপন চালিয়ে যাওয়া।

এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কাল তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না
এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কাল তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না, ছবি: এএফপি

বার্তা সংস্থা পিটিআইকে মদন লাল বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছে। এই ট্র্যাজেডি কোনোভাবেই ঘটা উচিত ছিল না। এটি পুরোপুরি এড়ানো যেত। মঙ্গলবার রাতে আপনি আহমেদাবাদে উদ্‌যাপন করলেন। তাহলে বেঙ্গালুরুতে উদ্‌যাপন করার জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন? উদ্‌যাপন দুই-তিন দিন পরেও হতে পারত। আরসিবি সমর্থকেরা তখনো পূর্ণ উদ্যমে উপস্থিত থাকতে পারত।’

ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত জনসমাগম দেখে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশ ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষকে ‘ভিক্টরি প্যারেডের’ অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। মালিকপক্ষ নাকি আদেশ অমান্য করেই কর্ণাটকের আইনসভা বিধান সৌধ থেকে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত প্যারেড করে। পরে পুলিশ এতে বাধা দেয়নি। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয়। সেই হুড়োহুড়িতেই পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

ভারতের বিশ্বকাপজয়ী পেসার মদন লাল
ভারতের বিশ্বকাপজয়ী পেসার মদন লাল, ছবি: পিটিআইয়ের এক্স হ্যান্ডল

মদন লাল তাই দায় দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সবাইকেই, ‘কে দায়ী—আরসিবি না রাজ্য সরকার? যদি রাজ্য সরকার বাধা দিত, তাহলে প্যারেড এগিয়ে যেত না। তাই সরকার অবশ্যই দায়ী। কিন্তু আরসিবিও দোষী। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর মাত্র চার ঘণ্টা পরেই দলকে জনসাধারণের সঙ্গে উদ্‌যাপনের জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের এত তাড়া কীসের? আইপিএল দলগুলোর বিশাল ভক্ত রয়েছে। এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক বড় ভুল করেছেন।’

বেঙ্গালুরু ট্র্যাজেডি নিয়ে বার্তা সংস্থা আইএএনএসকেও নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মদন লাল। সেখানে কথা বলতে গিয়ে তিনি বেঙ্গালুরুর মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন, ‘যখন বাইরে মানুষ মারা যাচ্ছিল, তখন তারা ভেতরে উৎসব করছিল। এটা সত্যিই মর্মান্তিক এবং হতাশাজনক। মৃতদের পরিবারের উচিত এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য আরসিবি এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি রুপির মামলা করা।’

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় বেঙ্গালুরু পুলিশ
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় বেঙ্গালুরু পুলিশ, ছবি: এএফপি

প্রথমবার আইপিএল শিরোপা জেতা কোহলিও হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় হতবাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বলার মতো অবস্থা নেই। খুবই ভয় পেয়েছি।’

ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার লিখেছেন, ‘বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আমার হৃদয় আজ বেদনার্ত। সবার শান্তি ও শক্তি কামনা করছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.