কোরবানির জন্য ৭০-৮০ হাজারের মধ্যে গরু খুঁজছেন ক্রেতারা

0
30
দেখতে সুন্দর, স্বভাবে তেজি— এমন গরুর দামও বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। আজ বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম নগরের বিবির হাটে
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও তাঁর দুই ভাই মিলে প্রতিবছর কোরবানির পশু কেনেন। গতবার হাট থেকে ৭৪ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছিলেন। এবারও হাটে ঢুঁ মেরেছেন কয়েকবার; কিন্তু যেটি পছন্দ হয়েছে, সেটি দামে মেলেনি। তাই কেনা হয়নি।
 
আজ বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ রুহুল আমিন এসেছিলেন চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ এলাকায় অবস্থিত চৌধুরী র‍্যাঞ্চে। সেখানেই কথা হলো রুহুল আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, এবার ৭০ হাজার টাকা বাজেট করেছেন; কিন্তু এ বাজেটে হাটে গরু মেলাতে পারছেন না। এ কারণে খামারগুলো ঘুরে দেখছেন। দামে মিলে গেলে কিনে নেবেন।
 
এবার ঈদ উপলক্ষে চৌধুরী র‍্যাঞ্চে ১৫০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর মধ্যে আর ২২টি বাকি আছে। খামারের পরিচালক রাশিদ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, তাঁদের খামারে বিক্রি শেষ পর্যায়ে। রুহুল আমিনের মতো কয়েক শ ক্রেতা-দর্শনার্থী পরিবার নিয়ে প্রতিদিন খামারে আসছেন। ক্রেতার চাহিদার কথা বিবেচনা করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের গরুও তিনি রেখেছেন। এসব গরুর একেকটির ওজন দুই থেকে আড়াই মণ।
 
চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলি এলাকার আরেক খামার সিটি অ্যাগ্রোতেও এখন আর গরু নেই বললে চলে। ১৬১টি গরু তুলেছিলেন খামারি এনামুল হক। আর মাত্র ৭টি গরু বাকি আছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৪ মণ ওজনের লালুর দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। এনামুল হক বলেন, তাঁর খামারে সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকায় গরু পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক ক্রেতা এ দামে গরু কিনেছেন।
 
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, চট্টগ্রাম জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬ হাজার খামার রয়েছে। এর মধ্যে নগরে আছে দেড় শতাধিক খামার। বড় আকারের খামার রয়েছে ৫০টি। মূলত বড় ও মাঝারি খামারে বিক্রির ব্যস্ততা চলছে। বড় খামারগুলো আবার অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয়। ফলে অনলাইনে দেখেও অনেক ক্রেতা ঢুঁ মারছেন খামারে।
 
খামারিরা বলছেন, শেষ সময়ে এসে ক্রেতারা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে গরু খুঁজছেন। অনেক পরিবারে দু–তিনজন মিলেও গরু কিনেছেন। তবে এ বাজেটে গরু মেলাতে গলদঘর্ম অবস্থা হচ্ছে। কারণ, গরু পালনে খরচ বেড়ে গেছে। খাবারের দাম বাড়তি। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম খামারেই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি পড়ছে। এ ছাড়া গরুর মধ্যে শাহিওয়াল, দেশি, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু পাওয়া যাচ্ছে খামারে।
 
ওজি ফার্মসের কর্ণধার তানভির কালামও দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, ৮৩টি গরু তিনি বিক্রি করেছেন এবার। এখন ১৭টি গরু আছে খামারে। সর্বনিম্ন ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তবে তাঁর খামারে গরুর দাম গত বছরের তুলনায় এবার অন্তত ১০ শতাংশ বেশি ছিল।
 
সীতাকুণ্ডের এসএমএন এগ্রোতে ১১টি গরু ছিল। এখনো ৫টি গরু বিক্রির অপেক্ষায় আছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবদুল্লাহ আল মাসুম জানান, ক্রেতারা ছোট আকারের গরু বেশি খোঁজেন। তবে তাঁরা ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে গরু প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু সব গরু বিক্রি হয়নি। আশা করছেন ঈদের আগে সব বিক্রি হয়ে যাবে।
অনলাইনেও সরব খামারিরা
 
হাটবাজারের বাইরে অনলাইনে গরু-ছাগল কেনাবেচা জমে উঠেছে। করোনাকালের সময় থেকে অনলাইন বাজার বড় হতে শুরু করে। এবারও বড় খামারগুলো অনলাইনে বেশ সক্রিয়। সিটি অ্যাগ্রো, চৌধুরী র‍্যাঞ্চ, নাহার অ্যাগ্রো, শাহ আমানত অ্যাগ্রোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গরুর ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছে। ক্রেতারা এসব ভিডিও দেখে গরু পছন্দ করছেন। খামারে গিয়ে কিনে নিচ্ছেন। অবশ্য শহরের ক্রেতারা গরু কিনতে অনলাইনের ব্যবহার বেশি করেন। গ্রামে এখনো প্রথাগত হাটের ওপর নির্ভর করেন কোরবানিদাতারা। এ বিষয়ে সিটি অ্যাগ্রোর কর্ণধার এনামুল হক বলছিলেন, এখন কোরবানিদাতারা অনলাইনে পছন্দ করে রাখেন। অনলাইনে নিয়মিত ভিডিও এবং ছবি দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে দামও লেখা থাকছে। ফলে কিছুটা দরদাম করে সহজেই কেনা যাচ্ছে পছন্দের গরু।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.