কোন মন্ত্রে মাত করল ‘সাইয়ারা’

0
17
‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

মায়া মায়া চেহারার শান্ত এক মেয়ে বসে আছে কোর্ট রুমে। আজ তার বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু একটা ফোনকল নাড়িয়ে দেয় সবকিছু। ভেঙে যায় ভানি বাত্রার বিয়ে।
ছয় মাস পর ভানি উঠে দাঁড়ায়। কাজ নেয় এক পত্রিকা অফিসে। কিন্তু প্রথম দিনই মুখোমুখি হয় এক রাগী, বদমেজাজি উঠতি গায়কের। ধ্বংসাত্মক তাঁর আচরণ। রেগে গেলে কিছুরই পরোয়া করে না। সেদিনই ভানি জানতে পারে তার নাম কৃষ কাপুর। কৃষ স্বপ্ন দেখে একদিন বড় গায়ক হবে। কিন্তু স্বজনপ্রীতির চক্করে নিজের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পায় না। এ কারণেই তার এত ক্ষোভ। নিজের গানের দলের সদস্যদের সঙ্গেও মারামারি করতে দ্বিধা করে না সে।

একনজরে
সিনেমা: ‘সাইয়ারা’
জনরা: রোমান্টিক ড্রামা
পরিচালক: মোহিত সুরি
অভিনয়: আহান পান্ডে, অনীত পড্ডা, গীতা আগরওয়াল, রাজেশ কুমার, শাদ রন্ধাওয়া
রানটাইম: ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট

ভাগ্যের ফেরে ভানি আর কৃষ আবার এক হয়। তবে প্রয়োজনটা নেহাতই স্বার্থের। তবে দ্রুত ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। কৃষ আর ভানি যখন ধীরে ধীরে কাছে আসতে শুরু করে, তখনই এক কঠোর সত্য এসে তছনছ করে দিতে চায় সব। কৃষ হারাতে থাকে ভানিকে। কী হয় শেষ পর্যন্ত, তা জানতে হলে দেখতে হবে ‘সাইয়ারা’ সিনেমাটি।
বলিউড সিনেমার একের পর এক টেনেটুনে হিট সিনেমার মধ্যে ‘সাইয়ারা’ যেন এক ব্যতিক্রম। গত ১৮ জুলাই মুক্তির পর থেকেই চলছে ‘সাইয়ারা’-ঝড়।

৪৫ কোটি বাজেটের এ সিনেমা মুক্তির প্রথম দিনই তুলে নেয় ২০ কোটি রুপি। দুই নতুন মুখকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নির্মাতা মোহিত সুরি মাত করে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সিনেমাটি ৩০০ কোটি রুপির বেশি আয় করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সিনেমার আয় ৩৫০ কোটি পর্যন্ত যেতে পারে।

‘সাইয়ারা’ খুব একটা ব্যতিক্রমী প্লটের গল্প নয়। বরং এ সিনেমার গল্পের মিল আছে ‘বেলাশুরু’, ‘আশিকি ২’, ‘সনম তেরি কসম’-এর মতো জনপ্রিয় সিনেমার সঙ্গে। তবে নির্মাতা মোহিত সুরি তাঁর জাদু দেখিয়েছেন নতুন দুই মুখের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে।

‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি
‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

ভানি বাত্রার চরিত্রে নায়িকা হিসেবে অনীত পড্ডা ও কৃষ কাপুরের চরিত্রে আহান পান্ডে দুজনেরই প্রথম সিনেমা ‘সাইয়ারা’। দুজনের অভিনয় মন ছুঁয়েছে দর্শকদের। সেই সঙ্গে একের পর এক দারুণ গান প্রাণ দিয়েছে এ সিনেমায়। আর ছিল বেশ কিছু চমক, যা নির্মাতা পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন দারুণভাবে। তাই চেনা এক প্রেমের গল্পও পেয়েছে নতুন ছোঁয়া, ছুঁয়ে গেছে দর্শকদের।

তবে এ সিনেমা হয়তো পোড় খাওয়া দর্শকদের খুব একটা ভালো লাগবে না। নির্মাতার টার্গেট অডিয়েন্স যে তরুণ প্রজন্ম, তা সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল হওয়া রিলস থেকেই অনুমান করা যায়। এ সিনেমা এত ব্যবসাসফল হওয়ার পেছনে কাজ করেছে দর্শকদের ‘মুখের কথা’, যা কিনা আজকের দিনের সোশ্যাল মিডিয়া রিলস কিংবা টিকটক পোস্ট।
তবে সিনেমার মান বিচার করলে মোহিত সুরি নির্মাণের দিকে কোনো ছাড় দেননি। কৃষ কাপুরের কনসার্ট, নায়ক-নায়িকার রসায়ন যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা যেকোনো বয়সী দর্শকদের দেখতে ভালো লাগবে।

‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি
‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

প্রথম দিকে গল্পের নির্মাণ ভালো, দ্বিতীয় অংশে গল্প কিছুটা ধীরে এগোয়। ভানির মা-বাবার মেয়ের প্রতি উদাসীনতা চোখে লাগে খুব। ভানি আর কৃষের বাইরে অন্য কোনো চরিত্র যেন নির্মাতা দেখাতেই চাননি। তাই বেশ কিছু সম্ভাবনাময় চরিত্র উঁকি দিলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কাউকেই মনে থাকে না। কৃশ যখন একটা সময়ে জনপ্রিয় হতে শুরু করে, তখন সে গান না গেয়েই কীভাবে এত এত দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়, সেটা একটা প্রশ্ন রেখে যায়। আবার দল থেকে তার বারবার চলে যাওয়া বা ফিরে আসাটাও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কৃষের বাবার চরিত্রটিও যেন অযথাই টেনে আনা হয়েছে।

‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। প্রযোজনা সংস্থার এক্স থেকে
‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। প্রযোজনা সংস্থার এক্স থেকে

মেয়েটির অসুস্থতার প্রকাশ যেভাবে এ ছবিতে দেখানো হয়, তা নিয়ে আলঝেইমার রোগটি সম্পর্কে খানিক বিভ্রান্তি তৈরি হয়। মেয়েটি ভুলে যাওয়ায় পর যে অবস্থায় সে দুই বছর থাকে, তারপর এক লহমায় সব মনে পড়ে যাওয়া বেশ অবাস্তব। তবে আবেগ যে সিনেমার মূল মন্ত্র, সেখানে এত যুক্তি আর কেই-বা খুঁজতে যায়।

তবে কৃষ কাপুরের ‘রেড ফ্ল্যাগ’ থেকে ‘গ্রিন ফ্ল্যাগ’ হওয়াটা যেন এ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বানানো। যে প্রেমে বদলে যায় জীবন, আর যেখানে প্রেমিকার স্মৃতিতে একমুহূর্ত বেঁচে থাকার জন্য নিজের সব ছেড়ে আসা যায়। তাই অ্যাকশন, সহিংসতা আর থ্রিলার-সাসপেন্স এড়িয়ে এ সিনেমা যেন একটা শ্বাস নেওয়ার অবকাশ দেয়। চিত্রনাট্যকার সংকল্প সদানাহ এই আন্তরিক মুহূর্তগুলো তৈরির পেছনে ভালো কাজ করেছেন।

‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে
‘সাইয়ারা’ সিনেমার দৃশ্য। ইনস্টাগ্রাম থেকে

হারানোর ভয়, ফিরে পাওয়ার আশা আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি খাঁটি প্রেমের গল্প ‘সাইয়ারা’। গল্প সাদামাটা হলেও ফাহিম আবদুল্লাহ, জুবিন নাটিয়াল, অরিজিৎ সিং ও শ্রেয়া ঘোষালের গান আর আহান ও অনীতের অভিনয়ে মাত করেছেন মোহিত সুরি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.