চলতি বছর বিশ্বে ধনী ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর জন্য দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় গন্তব্য হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ধনীদের গন্তব্যের দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার পরই দেশটির অবস্থান। অর্থাৎ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কোটিপতি ও ধনী পরিবারগুলো আমিরাতে বিনিয়োগ ও বসবাসের জন্য স্থানান্তরিত হতে চায়।
বিপরীতে ধনীদের নিজ দেশ ছাড়ার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপর ভারত, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার অবস্থান। অর্থাৎ এসব দেশ থেকে ধনীরা অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে চান। বিশেষ করে, আরব আমিরাতে স্থানান্তরের দিক দিয়ে শীর্ষ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও খালিজ টাইমসের।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বের উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের (এইচএনআই) স্থানান্তর নিয়ে হেনলি প্রাইভেট ওয়েলথ মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৩ প্রকাশ করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক বৈশ্বিক সম্পদ গোয়েন্দা সংস্থা নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথের পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানেই ধনীদের বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরের বিষয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে এইচএনআই বলতে সেই ধরনের ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যাঁদের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ মার্কিন ডলার কিংবা তার বেশি।
জনপ্রিয়তায় শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া-আরব আমিরাত
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের সবশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশি এইচএনআই আকর্ষণ করবে। অর্থাৎ চলতি বছর বিশ্বে স্থানান্তর হতে চাওয়া ধনী ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর বেশির ভাগ যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। গত বছর দেশটিতে ৩ হাজার ৮০০ জন মিলিয়নিয়ার বসতি গেড়েছিলেন। চলতি বছর সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ হাজার ২০০ জনে পৌঁছাতে পারে।
তালিকায় এরপরই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান। আমিরাত চলতি বছর সাড়ে চার হাজার নতুন মিলিয়নিয়ার পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম। ২০২২ সালে দেশটি ৫ হাজার ২০০ জন মিলিয়নিয়ার পেয়েছিল। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটি চলতি বছর ৩ হাজার ২০০ এইচএনআই পাবে বলে ধারণা করেছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ৯০০ জন মিলিয়নিয়ার বাস করছেন, যাঁদের একেকজনের সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। এ ছাড়া ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ আছে এমন ২৯৮ জন সেন্টি-মিলিয়নিয়ার ও ২০ জন বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি রয়েছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটি ধনীদের জন্য কেবল নিরাপদ আশ্রয়ই নয়, বরং সম্পদ সংরক্ষণের জন্যও একটি ভালো জায়গা বলে মনে করা হয়। এ কারণে বিশ্বে ধনী ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভারত ও বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ধনীরা প্রতিবছর আরব আমিরাতে পাড়ি জমাচ্ছেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি ধনী স্থানান্তরিত হবেন। এরপর যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, লেবানন, পাকিস্তানের অবস্থান। এ ছাড়া এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশ থেকেও ভালো সংখ্যায় ধনীরা আমিরাতে স্থানান্তরিত হবেন।
ধনীদের দেশ ছাড়ায় শীর্ষে চীন-ভারত
বিশ্বব্যাপী এইচএনআই বহিঃপ্রবাহের শীর্ষে আছে চীন। অর্থাৎ দেশটি থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যায় উচ্চ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিরা বাইরে চলে যাচ্ছেন। চলতি বছরে চীন থেকে এইচএনআই বহিঃপ্রবাহের পূর্বাভাস করা হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার জন। এই সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ১০ হাজার ৮০০। এরপরই আছে ভারতের অবস্থান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর প্রায় সাড়ে ছয় হাজার এইচএনআই বা উচ্চ সম্পদের অধিকারী ভারতীয় নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে পারেন। যদিও এটি গত বছরের সাড়ে সাত হাজারের তুলনায় সামান্য কম।
তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটি থেকে চলতি বছর ৩ হাজার ২০০ জন ধনী অন্য দেশে স্থানান্তরিত হতে পারেন বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গত বছর দেশটি থেকে ১ হাজার ৬০০ জন ধনী অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
দেশভিত্তিক তালিকায় দেখা গেছে, বর্তমানে চীনে ৭ লাখ ৮০ হাজার মিলিয়নিয়ার রয়েছে। এর বিপরীতে ভারতে রয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার মিলিয়নিয়ার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অতি সম্পদশালী ধনীদের জনসংখ্যা ২০৩১ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এই সময়ের মধ্যে ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল সম্পদের দেশগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত হবে। ভারতে এইচএনআইয়ের এই বৃদ্ধি মূলত দেশটির অভ্যন্তরীণ সমৃদ্ধ আর্থিক পরিষেবা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তি খাত থেকে হবে।
দুবাইভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান হুরানি অ্যান্ড পার্টনার্সের অংশীদার সুনিতা সিং-দালাল বলেন, অতিরিক্ত করারোপ, বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা ও আইনের অপব্যবহার ইত্যাদি কারণে ভারত থেকে বিনিয়োগ অভিবাসন ঘটছে।
যেসব ভারতীয় ধনী দেশ ছাড়ছেন, তাঁদের জন্য সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য হচ্ছে দুবাই ও সিঙ্গাপুর। দুবাইকে ভারতের পঞ্চম শহরও বলেন অনেকে। বিনিয়োগকারী ব্যক্তিদের জন্য দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা কার্যক্রম, ব্যবসা অনুকূল পরিবেশ ও একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক বাস্তুতন্ত্রের জন্য সারা বিশ্বের ধনী বিনিয়োগকারী ব্যক্তিদের জন্যই দুবাই বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
তবে অনেক ধনী ব্যক্তি যেভাবে ভারত ছাড়ছেন, তেমনি অনেক ধনী আবার ভারতে ফিরেও আসছেন। এই বিষয়ে প্রতিবেদনে সঠিক সংখ্যা জানানো হয়নি। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ বলেছে, ভারতে জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। এ কারণে ধনী ব্যক্তিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে ফিরে আসছে।