সব কোচেরই নিজস্ব পছন্দ থাকে। ম্যাচে কাকে খেলাবেন, সেটি একান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত। পিটার বাটলারও নিজের পছন্দমতোই দল ও একাদশ গড়েন। কিন্তু বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এই ব্রিটিশ কোচের পছন্দের তালিকায় নেই সিনিয়ররা। এত দিন কথাটা দলের বাইরে থেকে অনেকে বলতেন। এবার দলের ভেতর থেকেই মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে কাল পাকিস্তানের সঙ্গে ১-১ ড্র ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হিসেবে ২৫ হাজার নেপালি রুপি পেয়েছেন খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা। আজ টিম হোটেলে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পাকিস্তান-ম্যাচের ব্যর্থতা নিয়ে নানা কথা বলেছেন তিনি। পরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন, কোচ কয়েকজন সিনিয়রকে না খেলানোয়।
মনিকা কী বলেছেন শুনুন, ‘আসলে আমাদের হেড কোচ মারিয়া, মাসুরা আপু, কৃষ্ণাদি—তাদের পছন্দই করে না। তাদের নামাবেই না সে। আমরা সিনিয়র খেলোয়াড়েরা গিয়ে কথাও বলেছিলাম যে কেন নামাচ্ছেন না, কী কারণ, আমাদের টিমের স্বার্থের জন্য ওদের প্রয়োজন আছে। আমরা যদি জিততে চাই, তাহলে ওদের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এই কথাগুলো বলেছিলাম আমরা সিনিয়র কয়েকজন গিয়ে। এরপরও উনি মানেনি।’
আসলে আমাদের হেড কোচ মারিয়া, মাসুরা আপু, কৃষ্ণাদি—তাদের পছন্দই করে না। তাদের নামাবেই না সে।
মনিকা চাকমা, মিডফিল্ডার, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গতকাল নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে শামসুন্নাহারের শেষ মুহূর্তের গোলে বাংলাদেশ ১-১ ড্র করেছে। এই ম্যাচে কোচ মাঠে নামাননি ফরোয়ার্ড সানজিদা ও ডিফেন্ডার মাসুরাকে। মারিয়া ও কৃষ্ণাকে নামান শেষের দিকে। কৃষ্ণা পুরো ফিট নন, তাই তাঁর বদলি নামা নিয়ে প্রশ্ন নেই। তবে মারিয়াকে একাদশে না রাখায় অনেকেই অবাক।
এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মনিকার আক্ষেপ বেরিয়ে আসে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় কোচ কেন সিনিয়রদের পছন্দ করেন না। মনিকা বল ঠেলেন কোচের কোর্টেই, ‘সেটা উনিই জানেন। সিনিয়রদের পছন্দই করেন না উনি, এটা মেইন কথা।’ এমনকি বিকল্প থাকলে মনিকার জায়গায় নাকি কোচ অন্য কাউকে খেলিয়ে দিতেন—এমন কথাও শোনা যায় মনিকার মুখে, ‘আমার পজিশনে যদি অন্য কেউ ভালো করত, তাহলে ওকেই নামাত। আপুর (সাবিনা খাতুন) পজিশনে যদি আপু অধিনায়ক না হতো, তাহলে অন্য কাউকে খেলাত।’
সিনিয়রদের খুব মিস করছেন মনিকা। অকপটে সেটিও বলেন। স্বপ্না গত সাফে ছিলেন, এবার নেই। সেটা উল্লেখ করে মনিকা বলে যান, ‘এবার মাঠে যেহেতু মাসুরা আপু, মারিয়া, সানজিদা, কৃষ্ণাদি তারা ছিল না, একটু প্রেশার ছিল। যেহেতু সিনিয়র খেলোয়াড়েরা মাঠে নেই।’
মারিয়াকে বেশি মিস করেছেন জানিয়ে মনিকার সংযোজন, ‘মারিয়া যদি মাঠে থাকে, তাহলে আমার মনে হয় আরও ভালো একটা রেজাল্ট আমরা পাব। মারিয়া, মাসুরা আপু, সানজিদা, কৃষ্ণাদি—সবাইকে খুব মিস করেছি।’
২৩ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও শেষ গ্রুপ ম্যাচ। সেমিফাইনালে উঠতে এ ম্যাচে ড্র করলেই চলবে। এমনকি ২ গোলের বেশি ব্যবধানে না হারলেও সমস্যা নেই। তবে ভারতের বিপক্ষে বেশি বেশি সিনিয়র খেলোয়াড় আশা করছেন মারিয়া, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ বেশ শক্তিশালী। যদি আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়দের দুই-তিনজনকে নামানো হয়, তাহলে হয়তো ভালো একটা রেজাল্ট আমরা আশা করি।’
মাসুদ আলম, কাঠমান্ডু থেকে