কুষ্টিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল।
কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ৫৪ মিলিমিটার ও ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৬৭ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শনিবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের টেলি প্রিন্টার অপারেটর মো. বাবলুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১০৫ মিলিমিটার, যা প্রায় সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
কুষ্টিয়া জেলায় বর্ষাকালে তেমন বৃষ্টি না হলেও শরৎকালে গত দুই দিন মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পৌর এলাকার কিছু জায়গায় বড় নালা থাকলেও ব্যাপক পরিমাণ বৃষ্টিতে পানি বের হতে পারছে না। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কোর্টপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেলদার হোসেন বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। হেঁটে চলাচল করা যায় না। এ ছাড়া বৃষ্টি হলেই রিকশা ও অটোরিকশার চালকেরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন। ২০ টাকার ভাড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা নেন।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম বলেন, টানা ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮ থেকে ১০ হেক্টর জমির মাষকালাই এবং ১৫ থেকে ২০ হেক্টর জমির বেগুন, মরিচ, টমেটো, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজসহ বিভিন্ন শাকসবজির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার, কোর্টপাড়া, কালিশংকরপুর, কাটাইখানা মোড়, র্যাব গলি, মাহাতাব উদ্দীন সড়ক, কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল, প্রধান ডাকঘর, আড়ুয়াপাড়া, কলেজ মোড়সহ হাউজিং এলাকার কিছু জায়গার সড়ক জলাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। অনেক বাসাবাড়ির নিচতলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরেও বৃষ্টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে আছেন। কিছু কিছু জায়গায় নালাগুলো বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতলসহ আবর্জনার কারণে পানি কম বের হচ্ছে। বাসাবাড়ির ভেতর নোংরা পানি ঢুকে পড়েছে। এমনকি নালার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে উঠে আসছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ব্যাপক পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। এখনো হচ্ছে। নালা দিয়ে পানি বের হতে একটু সময় লাগছে। তবে বৃষ্টি কমে গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহরে জলাবদ্ধতা কেটে যাবে।
এদিকে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কুমারখালী পৌরসভার শতাধিক পরিবার। স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, সড়ক ও উপজেলা পরিষদ চত্বর হয়েছে প্লাবিত। এতে স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছেন মানুষ।
কুমারখালী আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, তাঁর কলেজের প্রবেশমুখ ও মাঠে পানি জমে আছে। বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা মানিক হোসেন, বাড়ির আশপাশে পানিতে থই থই করছে। শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কুমারখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম রফিক বলেন, অর্থসংকটের কারণে ১৮৬৯ সালে নির্মিত প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। তবে সম্প্রতি ড্রেনেজ নির্মাণ বাবদ প্রায় ৭ কোটি টাকার কাজ দরপত্র করা হয়েছে। কাজ শুরু হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না।